মৌলিক চাহিদার একটি এই বস্ত্র এবং আমাদের দেশ বস্ত্রশিল্পের জন্য বিখ্যাত সেই যুগ যুগ থেকেই। এত স্বনামধন্য আমাদের পোশাক যে ১৮৪০ সালে যখন বস্ত্রশিল্প ছিলো ধ্বংসের মুখে তখনো ঢাকায় ৩৬ রকমের কাপড় বোনা হতো। এখনো সারা বিশ্বে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি তে আমাদের দেশ ২য় অবস্থানে থেকে দেশের এ ভাবমূর্তি অক্ষুণন রেখেছে৷ প্রসিদ্ধ এ শিল্পের সবথেকে প্রসিদ্ধ একটা অংশ ই আমাদের দেশীয় শাড়ি।
শাড়ির সাথে মিশে আছে প্রতিটি বাঙ্গালী নারীর অনেক গল্পকথা, অনেক আবেগ, ভালোলাগা, ভালোবাসা, সুখ দুঃখের স্মৃতি। শাড়ি পরতে পছন্দ করেনা এমন নারী খুঁযে পাওয়া মুশকিল। শাড়ি কে নিয়ে ভাবনা চিন্তার অন্ত থাকে না৷ আচাড় অনুষ্ঠান, ঘুড়াঘুড়ি কিংবা নিত্য নৈমিত্তিক জীবনেই শাড়ির সাথে আবর্তিত হয় অনেক কিছুই৷ শাড়ি আমাদের দেশের নারীদের পছন্দের প্রথম পোশাক বললেও ভুল হবেনা।
ইতিহাসবিদদের মতে শাড়ি শব্দটির জন্ম সংস্কৃত ‘সত্তিকা’ থেকে, যার অর্থ কাপড়ের টুকরা। শাড়ির প্রচলন যে কতকাল আগে থেকে চোখ আসছে তার সঠিক ধারণা কোথাও না পাওয়া গেলেও চর্যাপদের সময়ের আগেও এমন পোশাক ছিলো বলে ধারণা করা হয়। চর্যাপদ এ সরাসরি শাড়ি শব্দ না পাওয়া গেলেও সমার্থক পোশাকের বিবরণ মেলে। চৌদ্দ শতকের কবি চন্ডীদাস এর কবিতায় ও শাড়ি বস্ত্র টি পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় থেকে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর বিভিন্ন ভাস্কর্য তে শাড়ির মত পোশাক মেলে। অর্থাৎ এখানে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে শাড়ি কতটা পুরনো বস্ত্র।
বাংলাদেশে শাড়ি আবহমান কাল থেকেই চলে আসছে। শাড়ি পরার ধরন পাল্টেছে, অনেক অনেক শাড়ি এসেছে কিন্তু শাড়ির জায়গা টা ঠিক তেমন ই আছে, জীবনের সাথে মিশে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথেও শাড়ি মিশে আছে এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা নিয়ে আছে শাড়ি৷ গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা, রীতিনীতি, সংস্কৃতি সবকিছুর সাথে ই মিশে আছে শাড়ি , শাড়ি আমাদের জাতীয় পোশাক।
যেহেতু সেই আবহমান কাল থেকেই শাড়ির ইতিহাস আমাদের দেশে খুব খুব সমৃদ্ধ, ব্যবসা বাণিজ্য সব কিছুই ছিলো শাড়ি কে ঘীরে অনেক বেশিই রমরমা, তাঁত এবং তাঁতী দের নিঁখুত কাজ আমাদের গর্ব তাইতো নানান রকমের শাড়ি তে আমাদের কোন কমতি নেই। সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু, নানান সময়ে নানান ধরনের শাড়ির প্রবর্তন হয়েছে এদেশে, অসংখ্য শাড়ির নাম পাওয়া যায় তাই ইতিহাসের সাথে সাথে, এখানে বেশ কিছু শাড়ি একত্র করার চেষ্টা করেছি। যেমনঃ
১. অরগেন্ডি শাড়ি
২. এপ্লিক শাড়ি
৩. এম্বুস শাড়ি
৪. এমিব্রয়ডারি শাড়ি
৫. এন্ডি সিল্ক শাড়ি
৬. এন্ডি কটন শাড়ি
৭. কাতান শাড়ি
৮. কোটা শাড়ি
৯. কাতান পাড় সুতি শাড়ি
১০. কাঁথা স্টীচ শাড়ি
১১. কাটওয়ার্কের শাড়ি
১২. কারচুপি শাড়ি
১৩. কটকি শাড়ি
১৪. ক্র্যাপ সিল্ক শাড়ি
১৫. খাদি শাড়ি (খাদি কটন শাড়ি, খাদি সিল্ক শাড়ি, খাদি স্ট্রাইপ শাড়ি)
১৬. গ্রামীণ চেক শাড়ি
১৭. গামছা শাড়ি
১৮. গঙ্গাযমুনা পাড় শাড়ি
১৯. গ্যাস কটন শাড়ি
২০. গরদের শাড়ি
২১. চুমকি শাড়ি
২২. চোষা শাড়ি
২৩. চুন্দ্রী বাটিক শাড়ি
২৪. চেক ধুপিয়ান শাড়ি
২৫. জামদানী শাড়ি
২৬. জুম শাড়ি
২৭. জয়শ্রী সিল্ক শাড়ি
২৮. জর্জেট শাড়ি
২৯. জুট কাতান শাড়ি
৩০. ঝর্ণা শাড়ি
৩১. টাইডাই শাড়ি
৩২. টিস্যু শাড়ি
৩৩. টুইস্টেড শাড়ি
৩৪. ডাংগ্য শাড়ি
৩৫. তাঁতের শাড়ি
৩৬. তসর সিল্ক শাড়ি
৩৭. তাতাল শাড়ি
৩৮. ক্রেপ শাড়ি
৩৯. থান এর এক কালার সুতি শাড়ি
৪০. থান এর এক কালার হাফসিল্ক শাড়ি
৪১. দোতার জামদানী শাড়ি
৪২. ধুপিয়ান শাড়ি
৪৩. ধানসিঁড়ি শাড়ি
৪৪. ধানচূড়া শাড়ি
৪৫. নঁকশীশাড়ি
৪৬. নায়লন সিল্ক শাড়ি
৪৭. নিব কটন শাড়ি
৪৮. পাটি শাড়ি
৪৯. পাটের শাড়ি
৫০. পিওড় সিল্ক শাড়ি
৫১. পিনন শাড়ি
৫২. পাকিজা প্রিন্ট শাড়ি
৫৩. প্রাইড কটন শাড়ি
৫৪. পাবনার তাঁত এর বিভিন্ন শাড়ি
৫৫. ফেন্সি শাড়ি
৫৬. বাটিক শাড়ি
৫৭. বেনারসি শাড়ি
৫৮. বলাকা সিল্ক শাড়ি
৫৯. বালুচরি শাড়ি
৬০. ব্লকের হাফসিল্ক শাড়ি
৬১. বি প্লাস শাড়ি
৬২. বিশাল জর্জেট শাড়ি
৬৩. ব্লক শাড়ি
৬৪. ব্রাশ প্রিন্ট শাড়ি
৬৫. ভেলভেট শাড়ি
৬৬. মনিপুরী শাড়ি
৬৭. মসলিন শাড়ি
৬৮. ময়ূরপক্ষী শাড়ি
৬৯. মাসলাইস শাড়ি
৭০. মটকা সিল্ক শাড়ি
৭১. মালা শাড়ি
৭২. মোমবাটিক শাড়ি
৭৩. মাইরাং ফি শাড়ি
৭৪. মনিপুরী মোটিফ এর হাফসিল্ক শাড়ি
৭৫. মিরপুর এর বেনারসি শাড়ি
৭৬. মাদুরাই কটন শাড়ি
৭৭. মাদুরাই হাফসিল্ক শাড়ি
৭৮. রেশমী শাড়ি
৭৯. রাজশাহী সিল্ক শাড়ি
৮০. রংপুর এর বেনারসি শাড়ি
৮১. রাফ্যাল শাড়ি
৮২. শিবুরী শাড়ি
৮৩. শিফন শাড়ি
৮৪. শেড শাড়ি
৮৫. সিল্ক শাড়ি
৮৬. সেমি বলাকা শাড়ি
৮৭. সুতি শাড়ি
৮৮.সুতিপ্রিন্ট শাড়ি
৮৯. সফুরা শাড়ি
৯০.সামুসিল্ক শাড়ি
৯১.স্কিনপ্রিন্ট এর শাড়ি
৯২. সুতি তন্তুজ শাড়ি
৯৩. সিরাজগঞ্জ এর শাড়ি
৯৪. স্ল্যাব কটন শাড়ি
৯৫. স্বর্ণলতা শাড়ি
৯৬. হ্যান্ড পেইন্টের শাড়ি
৯৭. হাজারবুটি শাড়ি
৯৮.হাতের কাজের শাড়ি
৯৯. খেশ শাড়ি
এছাড়া ও অনেক ধরনের শাড়ি আছে, বিলীন ও হয়ে গেছে অনেক শাড়ি। বাঙ্গালী হিসেবে যে শাড়িগুলো খুব প্রচলিত, যে শাড়িগুলো গৌরবের সাথে রাজ করছে তেমন কিছু শাড়ি সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরবো এই আর্টিকেলটি তে।
মসলিন শাড়িঃ
যত যা ই বলি, শাড়ি নিয়ে আলোচনা তে মসলিন কিন্তু শীর্ষে। মসলিন আমাদের গৌরবাজ্জ্বল ইতিহাস এর একটি অংশ। মসলিন নিয়ে জল্পনা কল্পনার অবসান হয়তো কোনদিন ই হবেনা ইভেন মসলিন নিয়ে লিখতে গেলে লেখা ও শেষ হবেনা, মসলিন এতটাই সমৃদ্ধ। সারাবিশ্ব জয় করেছিলো আমাদের ঢাকাই মসলিন। এর ইতিহাস অনেক পুরোনো, কতটা তার সঠিক ব্যপ্তি জানা নেই কোথাও। তবে রোম সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগের নারীদের পোশাকের বর্ণনা তে ও মসলিন পাওয়া যায়৷ চতুর্দশ শতাব্দীতে ইবনে বতুতা যখন বাংলায় আসেন, তার পর্যটন কাহিনীতে ও সূক্ষ্ম বস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। শপ্তদশ শতাব্দীতে যখন বাংকার রাজধানী ঘোষণা করা হয় ঢাকা কে তারপর থেকে তো ইউরোপীয় বণিক রা এদেশে ব্যবসা শুরু করেন, মসলিন ছিলো বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু৷ কত দেশে যে এই মসলিন রপ্তানি হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা মিলিয়ে প্র্য ২৮ ধরনের মসলিনের বর্ণনা পাওয়া যায়, এর ই এক ধরণ আজ ও টিকে আছে, আমাদের জামদানী।
মসলিন এত সূক্ষ্ম ছিলো যে তার নিম্নের কাউন্ট ই ছিলো ৩০০৷ ঊর্ধ্বে ১২০০ কাউন্ট পর্যন্ত ও হয়েছে এই মসলিন। মসলিন এত সূক্ষ্মএক্স এত মিহি ছিলো যে পশ্চিমা ক্রেতারা বিশ্বাস ই করতেন না এ মানুষের হাতে তৈরি৷ মুঘল সময়ে মসলিন বাণিজ্য ছিলো সবথেকে লাভজনক। এত লাভজনক ব্যবসা জন্য ওলন্দাজরা ঢাকায় কুঠির স্থাপন করেন। সেই সময় মসলিনের রপ্তানি এত বেড়ে যায় যে ইউরোপীয় বাজার দখল করে নেয়। এত বেশি চাহিদা ছিলো যে তাঁতীরা কাজ করেও সারতে পারতোনা জন্য তাদের অনেক অত্যাচার ও সহ্য করতে হতো৷
পলাশীর যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একচেটিয়া আধিপিত্য, ইংল্যান্ড এর বিভিন্ন শিল্প উদ্ভাবণী, এবং সস্তা পণ্যের কাছে দামী মসলিন এর বাজার কমে যেতে থাকে। মোগলদের জৌলুস কমে যেতে থাকে এবং মসলিন এর দক্ষ তাঁতীরা অনাহারে দিন কাটাতে থাকলো, ইউরোপীয় বণিকরা নীলচাষ সহ বিভিন্ন কিছুতে এনভলভ করে ফেললো, সেই নিদারুণ জনজীবন এর ইতিহাস কম বেশি অনেকেই জানি আমরা। হারিয়ে গেলো ফুটি কার্পাস গাছ, হারিয়ে গেলো সেই তুলা চাষ, হারালো আমাদের মসলিন।
১৮৫০ সাল থেকে মসলিন উৎপাদন বন্ধ হলেও আশার বাণী এটাই যে ১৭০ বছর পরে মসলিন নিয়ে আবারো চেষ্টা করছে একদল গবেষক। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এনশ একবার্ট মিউজিয়াম এর মসলিন শাড়ির সঙ্গে মিল রেখে বানানো হয়েছে প্রাথমিক ভাবে ৬ টি মসলিন। এর পেছনেও রয়েছে গবেষক দলদের বিশাল অবদান। তারা বাণিজ্যিক ভাবে মসলিন করার কথা চিন্তা করছেন এবং এর জন্য ফুটি কার্পাস এর অনেক গুলো জাত চাষ করে তৎকালীন মসলিনের উপযোগী ফুটি কার্পাস এর সাথে ডিএনএ সিকুয়েন্স এর মাধ্যমে সেটি চাষ করতে সক্ষম ও হয়েছেন৷ এখন বাণিজ্যিক ভাবে কাজ করার অপেক্ষা৷ সময় স্বাপেক্ষ তবে এটি হলে বাংলাদেশ এর ভাবমূর্তি বিশ্বের দরবারে আরেকধাপ উঁচু হবে এই মসলিন দিয়েই৷ ইতিমধ্যে এটি আমাদের জিআই পণ্য হিসেবে সনদপ্রাপ্ত ও হয়েছে৷
জামদানী শাড়িঃ
শাড়ী পিয়াসী নারীদের অন্যতম আকর্ষণ এর একটি জায়গা আমাদের ঢাকাই জামদানী। জামদানীর নকশায় রয়েছে বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি, লতাপাতা সহ অনেক কিছু,তাঁতীরা আবেগ নিয়েই সব সময় জামদানী বুনেন।
জামদানী শিল্প পরিপূর্ণ রূপ পায় মুগল যুগে। ঢাকার অনেক জেলাতেই কম বেশি জামদানী ও মসলিন বোনা হতো তবে ঢাকা, সোনারগাঁও, ধামরাই, তিতাবাড়ি, জঙ্গলবাড়ি, বাজিতপুর প্রসিদ্ধ ছিলো। বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন তোলা হয় জামদানী তে। নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁও ও সবথেকে বেশি জামদানী তৈরি হয়।
১৭৪৭ সালের এক হিসেব অনুযায়ী দিল্লীর বাদশাহ একবার বাংলার নবাব ও জগৎশেঠের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার জামদানী কিনেন, সেই সময়ে এগুলো শুধু বিলাসিতা ই ছিলো৷ ১৭৭৬ সালে খুব ভালো মানের জামদানীর মূল্য ছিলো ৪৫০ টাকা।
জামদানী কার্পাস তুলা থেকে প্রস্তুত এক ধরনের সুতায় তৈরি যা ২০১৩ সালে ‘ইনট্যানজিবল হেরিটেজ অব বাংলাদেশ’ হিসেবে ঘোষিত হয় এবং ২০১৬ সালে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। জামদানী এতটাই প্রসিদ্ধ যে পাকিস্তান, ভারত, কানাডা ও ইউরোপে প্রতিবছর জামদানী মেলা বসে।
জামদানী শাড়ি প্রায় একই রকম দেখতে হলেও অনেক রকমফের আছে। যেমনঃ
Ø ঢাকাইয়া জামদানী
Ø টাঙ্গাইল এর জামদানী
এসবের মধ্যে কটন, হাফসিল্ক এমন রকমফের তো আছেই।
এই শাড়িতে মূলত দুই ধরনের সুতা ব্যবহার করা হয়। যেমন
Ø সুতি সুতা
Ø হাফসিল্ক
হাফসিল্ক এর মধ্যে ও সুতা আবার দুই ধরনের হয়৷ তা হলোঃ
Ø রেশম
Ø নায়লন
বিভিন্ন ধরনের নকশা তৈরি করতেও জামদানী তে বিভিন্ন ধরনের সুতার ব্যবহার করা হয়৷ শাড়ি ভেদে, ডিজাইন ভেদে শাড়িতে সুতি, জরি, রেশম, পলিস্টার এই টাইপ সুতা ব্যবহার করা হয়৷ সুতার কাউন্ট ভিন্ন ভিন্ন হয়৷ আর এসবের উপর ভিত্তি করে শাড়ির প্রাইসিং ও ভিন্নরকম হয়৷ কাউন্ট বাড়তে থাকে শাড়ির প্রাইস ও বাড়তে থাকে।
জামদানী নিয়ে জানার শেষ নেই, কারণ অনেক বড় এই সেক্টর টা। দিন যত যাচ্ছে জামদানীর কদর তত ই বাড়তেছে। অনলাইন, প্রচার মিডিয়া, অনুষ্ঠান সবকিছুতে জামদানীর চাহিদা থাকে শীর্ষে। জামদানী পরিহিতা মানেই তার প্রেজেন্টেশন নজড়কারা৷ এই শাড়িগুলো নিয়ে যেমন উদ্যোক্তা বাড়ছে তেমনি বাড়ছে ক্রেতা আগ্রহ৷ নিজেদের স্বনামধন্য এই জামদানী কে আরো এগিয়ে নিতে এ পেশার সাথে জড়িত সকলের সিরিয়াসলি ভাবা উচিৎ জামদানী নিয়ে, কেননা জামদানী আমাদের সম্পদ।
বেনারসিঃ
একটা বেনারসি শাড়ির সাথে একজন নারীর কত হাজারো গল্প যে মিশে থাকে, একটি বেনারসি বউ সাজার স্বপ্ন নিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসে এমন বাঙ্গালী নারীর সংখ্যা ই হয়তো বেশি৷ মিরপুরের বেনারসি পল্লী আমাদের গৌরবের জায়গা, স্বপ্ন সৃষ্টি করার জায়গা৷ অনেক অনেক শাড়ির মাঝে বেনারসির জায়গাটা ই সকলের কাছে ভিন্ন৷
এর শুরুটা অনেক আগের৷ ১৬০৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময়টা তে গুজরাট থেকে তাঁতীরা একে একে স্থানান্তর হতে থাকে, সেই সময়ের পরেই মূলত বেনারসে এই শাড়ির বুনন শুরু হয় বলেই ধারণা করা হয়৷ তবে মোঘল আমলে এর অনেক উন্নতি সাধন হয়৷ সুতার সাথে সোনা, রূপার ব্যবহার ও ছিলো তখন এই বেনারসি তে। মিরপুরে যে বেনারসি পল্লী গড়ে উঠেছে তার তাঁতীরা ও ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকেই আসা৷ স্বাধীনতার আগে তারা এখানে এসে পাড়ি জমায়, মিরপুরে আর পুরান ঢাকায় বসতি গড়ে সবথেকে বড় অংশ ৷ দেশের অন্যান্য অংশে ও চলে যায়, তাঁত এর কাজ করে, তবে যেহেতু মিরপুরেই প্রায় ২০০ পরিবাস বসবাস শুরু করে তাই বেনারসির বড় পল্লী টি মিরপুরেই গড়ে উঠে।
বেনারসি সব সময় ই সিল্ক সুতায় বোনা হয়। তবে মিনা করার জন্য বা জমিনের ডিজাইন এ রুপালি, সোনালি জরি সুতার ব্যবহার করা হয়। মার্সেরাইজড কটন সুতা, গ্যাস সিল্ক সুতা, সিল্ক সুতা ব্লেন্ড করে ও বেনারসি বোনা হয়। ডিজাইন এর জন্য, সুতার পার্থক্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের বেনারসির নাম পাওয়া যায়। যেমনঃ
জংলা, বেল স্যাটিন, কাড়িয়াল, জামেবার, স্বর্ণকাতান, চান্দেরি, অরগাঞ্জা কাতান, পাটোলা, জুট কাতান, প্রিন্স কাতান, অরগন্ডি কাতান, ফুলকলি কাতান, মিলেনিয়াম কাতান, বেনারসি কসমস, টিস্যু কাতান, রিমঝিম কাতান, গিনি গোল্ড কাতান আরো বিভিন্ন কিছু।
আগে মিরপুরে আরো অনেক কারখানা থাকলেও এখন প্রায় দুই হাজার এর মত কারখানা আছে। এখানকার শাড়ি ভারত, পাকিস্তানীদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। সঞ্জয় লীলা বানসালির দেবদাস সিনেবার একটি গানের জন্য মিরপুরের বেনারসি শাড়ি ই নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
এছাড়া ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেনারসি পল্লী আছে যেখানে বেনারসি শাড়ি বোনা হয়। নারায়নগঞ্জ, রংপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল এ ও বেনারসি শাড়ি তৈরি হয়৷ সিরাজগঞ্জ ও পাবনার ঈশ্বরদী তে তৈরি বেনারসি ভারত সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করছে৷
দেশের অন্যান্য অনেক জেলাতেও তৈরি হয় বেনারসি শাড়ি, যা আমাদের লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে তবে এগুলোকে তুলে ধরতে পারলে শাড়ির বাজার আরো বড় হতো, রপ্তানি পরিমাণ বেড়ে যেত৷ আমাদের আরিফা মডেল এই কাজটা করছে, বিভিন্ন অঞ্চলের নতুন নতুন তাঁতপল্লী, তাঁত এর পণ্য সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি।
মনিপুরী শাড়িঃ
আমাদের দেশের নারীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শাড়ি মনিপুরী শাড়ি।। সিলেটের মনিপুরী সম্প্রদায় এ শাড়ি বুনিন করে। আসলে তারা প্রথমে নিজেদের বস্ত্র নিজেরা বুনন করতেন এবং পরবর্তীতে বাণিজ্যিকভাবে তা শুরু করেন। মনিপুরীদের ৯০% নারী রা তাঁত এর সাথে যুক্ত, তাদের সাথে এই পেশা এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে জন্ম থেকেই তারা এসবে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
তারা মূলত দুই ধরনের তাঁত এ ই কাপড় বুনে, মোয়াং অর্থাৎ মোটা সুতার তাঁত, পাং অর্থাৎ চিকন সুতার তাঁত৷ এদের শাড়ি গুলোর মূল বৈশিষ্ট্য ই হলো মৈরাংগ পাড় অর্থাৎ টেমপল এর মত পাড়। এখন রাজশাহী তে সিল্ক সুতার ও মনিপুরী মোটিফ এর শাড়ি তৈরি হয়। ইভেন টাঙ্গাইল এ ও হাফসিল্ক সুতায় মনিপুরী মোটিফ এর নকশা তৈরি হয় তবে সিলেটের শাড়ি গুলো একদক অন্যরকম এবং আসল মনিপুরী।
কোমড় তাঁত এ বুনন করা হয় এসব শাড়ি। আগে ভারত থেকে সুতা আসলেও এখন ঢাকা নরসিংদী থেকেও সুতা নিয়ে যেতে পারে তারা। একেকটি শাড়ি বুনতে ৪৫০- ৫৫০ গ্রাম সুতার প্রয়োজন হয়, কাজের উপর ডিওএন্ড করে সুতার পরিমাণ কমবেশি হয়। সুতার প্রসেসিং শেষে একটি শাড়ি বুনতে ই প্রায় চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে।। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাহিরের দেশে সুনাম কুড়াচ্ছে এসব মনিপুরী শাড়ি।
মনিপুরীদের ডিজাইন, তাদের কাজ, কাজের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয়গুলো সব কিছুই নিজেরা ই শেখা, বংশ পরম্পরায়। আরো অনেক বেশি উন্নত হতে পারে এ শিল্প যদি সঠিকভাবে এর প্রতি যত্নবান হওয়া যায়৷
খাদি শাড়িঃ
কুমিল্লার খাদি অত্যন্ত জনপ্রিয় যুগ যুগ ধরেই। তবে ১৯২১ সালে যখন মহাত্মা গান্ধীর ডাকা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় “স্বদেশী পণ্য গ্রহন করো আর বিদেশী পণ্য বর্জন করো” এই শ্লোগান এর উপর ভিত্তি করে মূলত খাদি শিল্পের সূচিনা হয় কুমিল্লা তে৷ খাদিকে মোটা কাপড় বা গরম লাগবে বলে অনেকের ই ধারণা থাকলেও সেই ধারণা এখন পুরোপুরি বদলে গেছে৷ সারাবছর ধরেই খাদির চাহদক আছে এবং ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের কারণে তা আবার মাথা নেড়ে উঠেছে।
গর্ত তাঁত এ পায়ে চালানো প্যাডেল দিয়ে খুব শ্রমসাধ্য এর প্রক্রিয়া, গর্তের মধ্যে তাঁত বসিয়ে এভাবে শাড়ি তৈরি হয় জয় এর নাম গর্ত থেকে খাদ অর্থাৎ খাদি হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। প্রতিদিন গড়ে একটি তাঁত এ ১২ গজ কাপড় তৈরি হয়।
১৯৬২ সালে কুমিল্লায় তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত একটি জরিপ হয়েছিলো, সে সময়ে ২৫ হাজার এর বেশি তাঁত ছিলো এবং এর সাথে জড়িত ছিলো প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। জনপ্রিয়তা কমে গেলেও পরবর্তীতে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি রাজিব আহমেদ এর দেশীয় পণ্যের উপর উপর গুরুত্ত্বারোপ এবং খাদি ওয়েভ এর ফলে আবারো ফিরেছে এর জনপ্রিয়তা৷
সিল্ক শাড়িঃ
শাড়ি অরেমীদের অত্যন্ত পছন্দের একটি শাড়ি হলো রাজশাহী সিল্ক।৷ স্বাধীনতার পর থেকে শাড়ির জগতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করেছে রাজশাহী সিল্ক শাড়ি৷ এ শিল্পকে কেন্দ্র করে গিড়ে উঠেছে কারখানা ও।।
রেশম নামক পোকা থেকে পাওয়া যে রেশমসুতা তার তৈরি শাড়িগুলো এক নামে পরিচিত সকলের কাছে। আগে সুতার বাজার সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ থাকলেও এখন তা বাহির থেকেও আসে।
বিভিন্ন ধরনের সিল্ক এর শাড়ি হয়। যেমনঃ
এন্ডি সিল্ক, মটকা সিল্ক, জয়শ্রী সিল্ক, বলাকা সিল্ক, তসর সিলক।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিল্ক এ নানান ধরনের কারুকাজ শাড়ি কে জমকালো রূপ দেয়৷ ২০২১ সালে এটি আমাদের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি ও পেয়েছে।
বাটিক শাড়িঃ
বাটিক বাংলাদেশ এর হস্তশিল্প ও কারুশিল্পের মধ্যে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ৷ ষাট এর দশকে কিছু প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে এর যাত্রা আমাদের দেশে শুরু হয়েছিলো, আস্তে আস্তে তা অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বাটিক মানেই নরম, আরামের একটি কাপড় এর রূপ ই ফূঁটে উঠে আমাদের সামনে।
পশ্চিমবঙ্গে বাটিক শিল্পের সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সং্যোগ রয়েছে৷ তিনি ইংরেজ শাসনের শেষের দিকে বাঙালিদের এই শিল্পের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করেন। এছাড়া মহাকবি কায়কোবাদ যখন বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন, সেসব দেশের বাটিক শিল্পের প্রতি তিনি এতটাই মুগ্ধ হন যে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করে শান্তিনিকেতন এ তিনি এ শিল্প পাঠ্য করে দেন। অনেক ধরনের বাটিক দেখা যায় আমাদের দেশে।
মোম বাটিক, কুমিল্লার বাটিক, টাই ডাই, চুনরি বাটিক, তুলি বাটিক, শিবুরি বাটিক এসব প্রতিটিই নিজ অবিস্থানে সেরা। বাটিক এ অনেক ভ্যারিয়েশন আনছেন এখন এর সাথে জড়িয়ে থাকা উদ্যোক্তারা। মসলিনে বাটিক টি এখন অনেকের মনে জায়গা করে নিচ্ছে। বাটিক আগে রেগুলার ইউজ এর কাপড় বলে মনে করা হলেও বাটিক এর বিভিন্ন আইটেম, অনেক ভ্যারিয়েশন বাটিক কে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে যে অনুষ্ঠান, অফিস আদালত সব কিছুতে বাটিক এর ব্যবহার চোখে পড়ার মত৷ বাটিক প্রিন্ট মানেই আরামপিয়াসী মানুষগুলো বেছে নেয় তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবহারে।
টাঙ্গাইল এর শাড়িঃ
টাঙ্গাইল এর শাড়ির ক্ষেত্র অত্যন্ত বড়৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই শাড়িগুলো অনেক বেশি প্রসারিত হয়। ১৯০৬ সালের মহাত্মা গান্ধী যখন স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দেন তখন মূলত টাঙ্গাইল এর এই কুটিরশিল্পে অনেক উন্নতি সাধন হয়৷ এখানকার তাঁতীরা ঐতিহ্যবাহী মসলিনের বংশধর, তারা এ এলাকায় এসে শুরুতে নকশাছাড়া কাপড় বুনতে শুরু করে এবং পরবর্তীতে শাড়ি এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে আজকের অবস্থানে চলে আসে, সারাবিশ্বে টাঙ্গাইল এর শাড়ি এক নামে পরিচিত৷ অনেক রপ্তানি ও হয়৷ প্রতি সপ্তাহে ৫০০০০ শাড়ি শুধু ভারতে ই যায়, অন্যান্য অনেক রাষ্ট্র ও টাঙ্গাইল শাড়ি আমদানি করে।
টাঙ্গাইল এর শাড়ি বলতে এক নামে সুতি শাড়ি চিনলেও আছে নানা ধরনের শাড়ি। সুতি তে ই হ্যান্ডলুম তাঁত এর যেমন হয় তেমনি মেশিনলুম এ ও হয় অসংখ্য শাড়ি। সুতি তন্তুজ শাড়িগুলো তো শাড়ির জগতে নতুনভাবে সাড়া ফেলতেছে।
সুতি কোটা শাড়ি গুলো ও অত্যন্ত পরিচিত, অনেক আরামদায়ক। ইভেন টাঙ্গাইল এর প্রতিটি শাড়ি তাদের নিজেদের জায়গায় সেরা মান রাখতে সক্ষম হচ্ছে৷
হাফসিল্ক শাড়ি :
টাঙ্গাইল এ আছে অনেক ধরনের হাফসিল্ক শাড়ি৷ হাফসিল্ক এর মধ্যে আবার বিভিন্ন ভ্যারাইটি, বিভিন্ন ডিজাইন শাড়ি তে অসংখ্য নাম যোগ করেছে। হাফসিল্ক এর জামিদানী, মাদুরাই, মনিপুরী মোয়িফ এ হাফসিল্ক, হাফসিল্ক এ তাঁত এর কাজ, এক রং হাফসিল্ক এ ব্লক, বাটিক, হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি কত কিছু করে যে এর সৌন্দর্য বর্ধন করা সম্ভব তা আমরা প্রতিনিয়ত ই দেখছি।
খেশ শাড়ি :
টাঙ্গাইল এ আরেকটি জনপ্রিয় শাড়ি আমাদের খেশ শাড়ি৷ শান্তিনিকেতন এর বীরভূম এ বিশ শতকের প্রাথমিক পর্যায়ে কাঁথা সেলাই এর টেকনিক কে কাজে লাগিয়ে এই শাড়ি তৈরির সূচনা হয়, যা এখন টাঙ্গাইল এর ও অন্যতম একটি পণ্য। এটি একটি রিসাইক্লিং পণ্য অর্থাৎ পুরনো শাড়ির ফালি থেকে তৈরি সুতা দিয়ে আবার নতুন খেশ এর জন্ম হয়। এক একটি পুরাতন শাড়ি থেকে বের হয় ৮০-৮৫ তি ফাঁলি সুতো, সেসব রিলে পেঁচিয়ে শুরু হয় খেশ এর কাজ।
অত্যন্ত সুন্দর ইউনিক একটি নকশার শাড়ি কটকি যা শাড়ির জগতে অন্যমাত্রা নিয়ে আসছে। কটকির জ্যামিতিক নকশা টা ই কটকি শাড়ির মূল আকর্ষণ। তবে এই নকশা টা করতেই অনেক শ্রম দিতে হয় তাঁতীদের৷ সুতা রঙ করার সময় ই এর কটকি নকশা টা উঠে যায়, সুতা দুই ইঞ্চি পরপর কস্টেপ দিয়ে বেঁধে ডায়িং করা হয়, এর ফলে যেখানে যে রঙ যতটুকু লাগবে তা রবগ হয়, মাঝে কস্টেপ করা অংশ সাদা ই থেকে যায়। তৈরি হয় সুন্দর কটকি র নকশা।
কটকি তে এমন হাফসিল্ক হয়, তেমনি ফুল সিল্ক হয়, মাসলাইস কটকি হয় এবং সুতি কটকি ও হয়৷ প্রতিটি ভ্যারিয়েশন ই অত্যন্ত সুন্দর, যে যার প্রেফারেন্স থেকে শাড়ি সেলেক্ট করে নিজের জন্য।
অত্যন্ত উন্নতমানের একটি শাড়ি হলো টাঙ্গাইল এর মাসলাইস কটন শাড়ি। এর সুতার কোয়ালিটি ই একে অন্য সব ধরনের শাড়ি থেকে আলাদা করে তুলেছে। খুব ই ভালো মানের কটন সুতা কে বিশেষ উপায়ে গরম পানিতে ফুটিয়ে সিদ্ধ করে সুতার শক্তি ও রঙ এর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা হয়৷ বুনন ও করা হয় এমনভাবে যাতে এগুলো অত্যন্ত মিহি হয়। বিভিন্ন ধরনের নকশা হয় এখন মাসলাইন এ। পাড়, আচল এর কাজ তো আছেই, পাশাপাশি এখন গ্রামীণ চেক, বলপ্রিন্ট এর নকশা, কটকি র নকশা বিভিন্ন ভ্যারিয়েশন এর জনপ্রিয়তা একদম তুঙ্গে তুলে দিচ্ছে।
টাঙ্গাইল এ আরেক ধরনের শাড়ি হয় যাকে জুম শাড়ি বলে। যদিও আগে এগুলো মনিপুরী রা ই বুনতো তবে এখন তা টাঙ্গাইল এর তাঁত এ ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এগুলোতে লিলেন ও সিল্ক সুতার মিক্সড করে বোনা হয়, যার জন্য শাড়ি গুলো পরিধান করলেই সুন্দর ঠান্ডা অনুভূত হয়। নেট এর মত বুনন শাড়ি গুলোর সৌন্দর্যে অন্য মাত্রা নিয়ে এসেছে।
শীতলপাটির বুননের মত বুনন করে এক ধরনের হাফসিল্ক শাড়ি তৈরি হয় টাঙ্গাইল এ যার নাম হলো পাটি শাড়ি৷ এই শাড়িগুলো ও ভীষণ ই আরাম ফিল করায় এবং স্মার্ট এক ধরনের লুক আসে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন থান, কাতান, সিল্ক, সুতি, হাফসিলজ এর অসংখ্য অসংখ্য শাড়ি আছে টাঙ্গাইল এ যা আমাদের রপ্তানি বাজার কে ও বেগবান করেছে৷
দেশে টাঙ্গাইল ছাড়া ও সিরাজগঞ্জ, পাবনার তাঁত এর শাড়ি গুলো ও রপ্তানি বাজারে ভূমিকা রাখছে।
স্বর্ণলতা শাড়িঃ
সিরাজগঞ্জ এর শাহজাদপুর এর তাঁতীরা স্বর্ণলতা নামের এ শাড়ি তৈরি করছে। হাফসিল্ক এর শাড়ির উপরে ঝুটের নকশা করা থাকে৷ এই ঝুট সুতা আনা হয় ভারত থেকে। সুতা এবং নকশার মিশেলে ডিজাইন টা এমন হয় যে শাড়ি টা মেলালেই স্বর্ণের মত ঝলমল করে উঠে ঝুটের নকশা। নারীদের পছন্দের জায়গা নিতে পারছে এই শাড়ি তাই দিন দিন প্রোডাকশন ও বাড়ছে এবং চাহিদা ও।
আমাদের দেশীয় তাঁত আমাদের গৌরবের জায়গা, এর ইতিহাস সব সময় ই গৌরবের ছিলো, দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই আছে তাঁত ও তাঁতী যারা তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি ও পোশাক। ই-কমার্স এ দেশীয় পণ্যের জাগরনের জন্য ই-ক্যাব এর প্রতিঠাকালীন প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ এর চেষ্টার ফলে আমরা দেশীয় বিভিন্ন শাড়ি উঠে আসতে দেখলাম দুই বছরে যা তাদের গর্বের জায়গা হাড়িয়েছিলো, নতুন ভাবে পরিচিত পেয়েছে অনেক অনেক শাড়ি ও দেশীয় পণ্য, তৈরি হয়েছে অনেক ই-কমার্স উদ্যোক্তা বিভিন্ন দেশীয় পণ্যের৷ এখন নতুন ভাবে বিভিন্ন জেলায় তাঁত, তাঁতীদের নিয়ে সরকারি ভাবেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷। এসব কার্যক্রম এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের তাঁত এর শাড়ি আরো উন্নত জায়গায় পৌঁছাবে আশা করা যায়৷
লেখিকাঃ
খুবই চমৎকার একটা আর্টিকেল দেশীয় শাড়ি নিয়ে।আমাদের দেশে এত প্রকারের শাড়ি আছে জানতাম না।ভালো একটা ধারণা পেলাম দেশীয় শাড়ির।অনেক তথ্যবহুল আর্টিকেল।অনেক ধন্যবাদ আপুকে আমাদেরকে দেশীয় শাড়ির সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
দেশীয় শাড়ির দারুন আর্টিকেল, পড়তে খুব ভালো লাগলো। কতো রকমের শাড়ি তৈরি হয় আমাদের দেশে আগে এসব জানতামও ন!!দেশীয় শাড়ি বলতে মসলিন,সিল্ক, জামদানী, বেনারসি আর টাঙাইলের তাতের শাড়িই চিনতাম। সামনে আরও অনেক কিছু জানতে পারবো আপনার আর্টিকেলের মাধ্যমে, ইন শা আল্লাহ।
অসাধারণ লেখা। এই লেখার মাধ্যমে দেশীয় শাড়ি সম্পর্কে মোটামুটি পুরো ধারনা পাওয়া যাবে। দেশীয় শাড়ি নিয়ে কন্টেন্ট এবং ছবি খুব কম। তাই এখানে লেখার এবং জানার সুযোগ রয়েছে।
Great article Amrita Rani Deb.
আলহামদুলিল্লাহ্ এত লম্বা পোস্ট শুধু পডে গিয়েছি অসংখ্য তথ্যের সন্ধান পেয়েছি শাড়ি নিয়ে । আপু দেশীয় সব শাড়িকে আমরা ক্টেঔটের মাধ্যমে সামনে নিয়ে আসব ইনশাআল্লাহ
অসম্ভব সুন্দর একটি আর্টিকেল পড়লাম।শাড়ীর ওয়েভে মসলিন নিয়ে অনেক তথ্য জানার সুযোগ হয়েছে।এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সব শাড়ীর পরিচিতি উঠে এসেছে।স্বর্ণলতা শাড়ির নাম প্রথম শুনলাম।কি সুন্দর নাম।
রাজিব স্যারের কল্যানে বিভিন্ন ছোট গ্রুপে অনেক শাড়ী সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে। শাড়ী মানেই জামাদানী,টাঙ্গাইলের বয়স্ক নারীদের শাড়ি,, আর বেনারসি শাড়িই জানতাম।কিন্তু এখন অনেক শাড়িই চিনি।
ধন্যবাদ পপি আপুকে এমন তথ্যপূর্ণ একটি আর্টিকেল লেখার জন্য।
আলহামদুলিল্লাহ্ অসাধারণ একটা আর্টিকেল পড়লাম বাংলাদেশের শাড়ি নিয়ে।
শাড়ি আর নারী একসূতায় গাঁথা।
এমন কোন নারী নাই যার শাড়ী ভালো লাগেনা।
আবেগ আর ভালোবাসার প্রথম পরশ শাড়ীকে ঘীরে।
ইডিসির কল্যানে এতো এতো তথ্য জানতে পারলাম শাড়ি নিয়ে।
ধন্যবাদ আপি
খুব ভালো লাগলো পড়ে।
৯৯ টা শাড়ির নাম জানতে পেরেছি।
আমাদের দেশে এতো ধরনের শাড়ি তৈরি হয় তা আগে জানতাম না।
আরিফা মডেল অনুসরণ করার জন্য অনেক জেলা সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
আর আপনার লিখা থেকে আরও বেশি জানতে পারলাম।
আমাদের দেশে তাতের এতো ধরনের শাড়ি তৈরি হয়।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
আমাদের দেশীয় এতো শাড়িগুলোর নাম একত্রে পেয়ে খুব ভালো লাগছে আর সেসব শাড়ির সুন্দর ও তথ্যবহুল লেখা সত্যিই প্রশংসার দাবিদ্বার। দোয়া রইল অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার।
একটা সময় ছিলো যখন শাড়ি বলতে টাংগাইল শাড়ি ও জামদানি শাড়িকেই চিনতাম । রাজিব আহমেদ স্যারের আইডিয়া আরিফা মডেল ফলো করে বেশ কিছু শাড়ির নাম তথ্য জানতে পারি ।
কিন্তু এখন ইডিসির কল্যানে এতো এতো নাম জানতে পারলাম। অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ এতো ভালো একটা কাজ করার জন্য। ধন্যবাদ পপি আপুকেও।
আমাদের দেশের শাড়ি গুলোর অন্তরঙ্গতা মিশে আছে বাঙালি নারীরা রন্দ্রে রন্দ্রে। প্রতিটি শাড়ির সাথে জড়িয়ে আছে অসংখ্য গল্প। বাঙালির ঐতিহ্যে শাড়ি চেতনায় শাড়ি।
চমৎকার একটি আর্টিকেল পড়লাম এবং দেশীয় শাড়ি সম্পর্কে জানলাম।
চমৎকার লিখেছেন আপু। ধন্যবাদ
অসাধারণ একটা আর্টিকেল হয়েছে আপু। বেগমপুরি শাড়ির নাম বাদ পড়েছে। এক কথায় পাবনার বিভিন্ন শাড়ি এসেছে। অনেক ধন্যবাদ আপু।
অসাধারণ একটা আর্টিকেল।
দেশীয় শাড়ি নিয়ে এমন তথ্যমূলক কোনো আর্টিকেল এর আগে প্রকাশিত হয়নি। আমাদের দেশে যে এত এত রকমের শাড়ি রয়েছে তা ধারণার বাইরে ছিলো। এই পুরো আর্টিকেল পড়লে আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন শাড়ি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা সম্ভব।অসংখ্য ধন্যবাদ ইডিসি এবং এই আর্টিকেলের লেখিকা পপি সরকার আপুকে যিনি এত ধরনের তথ্য সংযুক্ত করেছেন যা আমাদের দেশীয় শাড়ি সম্পর্কে জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলবে। 🥰
অনেক কিছু জানলাম আপু অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। অনেক তথ্য জানতে পারলাম।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু ।অনেক কিছু জানতে পারলাম।