স্বভাবগত ভাবেই আমরা বেশ আরামপ্রিয় জাতি। দিনশেষে সবার ই একটু নিজের মত করে এবং একদম স্বস্তিতে থাকতেই ভালো লাগে। পোশাক এর ব্যাপার টা বাদ যায়না এক্ষেত্রে। কেননা নিজেদের পোশাকের উপরেই অনেকটা নির্ভর করে নিজের আরাম আয়েশ। সারাদিনের ক্লান্ত পরিশ্রান্ত অবস্থায় প্রতিটা মানুষ ই চায় নিজের বাড়িতে এমন পোশাক বাছাই করতে যাতে করে ষোলআনা তৃপ্তি মেলে।
বেশিরভাগ ছেলেরা ই এক্ষেত্রর লুঙ্গিকে প্রায়োরিটি দিয়ে থাকে৷ সঠিক সংখ্যা বা শতকরার হিসাবে মেলাতে না পারলেও এই সংখ্যা টা অনেক অনেক বেশি৷
প্যান্ট, জিন্স, থ্রি কোয়ার্টার এসবের ভীড়েও লুঙ্গি হার না মেনে অপ্রতিরোধ্য গতিতেই এগিয়ে আছে। আমাদের দেশ ছেলে থেকে বুড়ো সবাই লুঙ্গি পরে৷ লুঙ্গি যেমন আরাম এর তেমন ই আমাদের দেশের লুঙ্গি গুণে ও মানে সেরা। এতটা ই সেরা এর জায়গা এবং উৎপাদন ও হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে যে দেশে চাহিদা মিটিয়ে ও বাহিরে রপ্তানি হয় এবং বাংলাদেশ আয় করে বৈদেশিক মুদ্রা।
লুঙ্গির সাথে মোটামুটি আমরা সবাই পরিচিত, বিশেষ করে আমাদের দেশে বসবাসকারি সবার কাছেই লুঙ্গি খুব পরিচিত এবং বেশ জনপ্রিয়। লুঙ্গি এমন একটি পোশাক যার ব্যবহার এ সেই কাপড় ছাড়া আর কিছুর ই দরকার হয়না, গোলাকার একটি পোশাক শুধুমাত্র কোমরে জড়িয়ে এক বা দুইটা গেঁড়ো বেঁধে দিলেই হয়ে যায় সম্পূর্ণ৷ আমাদের দেশে এটি ঘরে প্রতিদিনকার সঙ্গী হলেও বাহিরে এর দেখা মেলেনা বললেই চলে।
লুঙ্গির শুরুঃ
লুঙ্গি একটি বার্মিজ শব্দ। দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতির সাথে লুঙ্গির নাম জড়িয়ে আছে ওতোপ্রোতোভাবে৷ লুঙ্গি একটি বার্মিজ এর শব্দ। ধারণামতে ভারতের তামিলনাড়ু থেকেই লুঙ্গির সূত্রপাত এবং এখানে এখনো লুঙ্গির আধিপত্য রয়েছে। ভেস্তি নামক এক পোশাক কে লুঙ্গির উত্তরসূরি হিসেবে ধারণা করা হয় এবং এক সময় তামিলনাড়ু তে জেলেদের এক সম্প্রদায় ছিলো বারাদাভারগাল নামে, তারা এই পোশাকটি উৎপাদন করতো এবং রপ্তানি করতো আফ্রিকা, ইজিপ্ট, মেসোপটেমিয়া সহ অনেক দেশে। এখন উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে এই পোশাক টি ব্যবহার হয় এবং ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার ও শ্রীলঙ্কায় সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয়৷
বিভিন্ন দেশে লুঙ্গিঃ
মায়ানমার এ লুঙ্গিকে লোঙ্গাই বলা হয় এবং এটি তাদের জাতীয় পোশাক। পুরুষরা ঘরে বাহিরে সব জায়গাতেই লুঙ্গি পরে থাকে। মহিলারা ও এখানে লুঙ্গি পরে, তাদের লুঙ্গির নাম তামাইন৷
সোমালিয়া তে ও লুঙ্গির মত পোশাক ব্যবহার করা হয়। সোমালিয়ায় প্রেসিডেন্ট সহ সাধারণ জনগণ সকলেই লুঙ্গির মত পোশাকটি পরিধান করে থাকে, শুধুমাত্র অফিস সময় বাদে। তাদের লুঙ্গির সাথে একটি বেল্ট ও থাকে৷
ইয়েমেনে লুঙ্গিকে মা’আউস বলে এবং সব বয়সের পুরুষ রা ই এটি স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করে৷
জাপানে লুঙ্গিকে উৎসব এর পোশাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ে তে লুঙ্গি ব্যবহার করে এবং তা অন্যান্য নামার সাথে ইন করে পরা হয়৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে লুঙ্গি কে বেল্ট দিয়ে ইন করা হয় এবং অনেক সময় ই ইন করা হয় এবং সেসব লুঙ্গি ঝামেল বিহীনন। পকেট ও আছে সাথে বেল্ট।
তাছাড়া ও মালদ্বীপ, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, ক্যারিবীয় অঞ্চল, পলিনেশীয় দ্বীপপুঞ্জ, লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে লুঙ্গি বেশ জনপ্রিয়। অন্যান্য অনেক দেশে লুঙ্গি ব্যবহার করা হয়।
অনেক সম্প্রদায় এ লুঙ্গির মত পোশাক মেয়েরা ব্যবহার করলেও লুঙ্গি মূলত ছেলেদের ই পোশাক, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এক ই ধরণ লুঙ্গি পরে। এক সময় হিন্দুরা বেশিরভাগ ধুতি পরলেও এখন এই জায়গা টি ও নিয়েছে লুঙ্গি।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এটি পরিধান করা হয়না কিন্তু বিভিন্ন সময় উপহার হিসেবে একে ব্যবহার করা হয়৷ বিয়েতে বরকে বাটিক বা সিল্ক এর লুঙ্গি দেয়া হতো অনেক আগে, এমনকি শিক্ষক, ইমামদের ও লুঙ্গি উপহার হিসেবে দেয়া হতো এক সময়৷ লুঙ্গি কতটা পছন্দের পোশাক হতে পারে তা সব সময় ই আমরা উপলব্ধি করতে পারি মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর যেকোন ছবি দেখলেই৷ তিনি তার পোশাকে লুঙ্গিকেই বেছে নিতেন৷ এছাড়া ও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কবি সাহিত্যিক রা এই পোশাকের সাথেই স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পেয়েছিলেন।
আমাদের দেশের সাথে লুঙ্গির সম্পৃক্ততা অনেক অনেক বছর আগের। ১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় ও সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তানে ২৭০০০ এর বেশি হস্তচালিত তাঁত ছিলো। পাকিস্তানের আমলে তার উন্নতি না হলেও দেশ স্বাধীন হবার পর সেই তাঁত এ ই তৈরি হতো আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় বস্ত্র। তাছাড়া স্বদেশী আন্দোলনের সময় তো আমাদের দেশের বস্ত্রশিল্পে অনেক বেশিই উন্নতি সাধন হয়েছিলো৷ আস্তে আস্তে যেমন মানুষ বাড়তে থাকে, চাহিদা বাড়তে থাকে এবং বিভিন্ন কারণে হস্তচালিত তাঁত কমে যেতে থাকে। বিলীন বা নাই হয়ে যায়নি কিন্তু এর পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে পাওয়ারলুম।
১৯৯৮ সালের পর থেকে আমাদের বিদ্যুৎচালিত পাওয়ারলুম এ লুঙ্গি তৈরি হতে থাকে এবং প্রায় ৯০ শতাংশ লুঙ্গিই এই সকল তাঁত এ তৈরি। পাশাপাশি রয়েছে চিত্তরঞ্জন ও পিটলুম এ তৈরি লুঙ্গি। এসব লুঙ্গির সিংহ ভাগ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। আমাদের দেশের লুঙ্গির কদর রয়েছে অন্যান্য অনেক দেশে। প্রতিবছর প্রায় দুই কোটি লুঙ্গি রপ্তানি হয় মালয়েশিয়া, সৌদই আরব, ওমান, কাতান, বাহরাইন, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড, আমেরিকা সহ বিশ্বের প্রায় ২৫ টি দেশে। সেসব দেশে যেমন বাঙ্গালীরা তা কিনেন সাথে সেই সকল দেশের ই অনেকেই লুঙ্গি পরিধান করেন এবং তা বাংলাদেশ এর লুঙ্গি।
এছাড়াও সব মিলিয়ে ২০২১ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী দেশ ও বিদেশের বাজারে প্রায় সাড়ে দশকোটি লুঙ্গি বাজারজাত করা হয়, ওবং করোনার সময় তা হয়েছিলো ১১ কোটি।
লুঙ্গির ধরণঃ
বিভিন্ন দিক থেকে লুঙ্গির ধরণ বিভিন্ন রকম হয়।
ম্যাটেরিয়াল এর উপর ভিত্তি করেঃ
প্রথমে আসি কোন কোন ম্যাটেরিয়াল এর লুঙ্গি হয়। লুঙ্গি বিভিন্ন ধরণের ম্যাটেরিয়াল এ তৈরি হয়। যেমনঃ
- হাফসিল্ক
- সিল্ক
- তসর
- লিলেন
- পিউর সুতি
যেসব সংস্কৃতি তে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লুঙ্গির প্রচলন আছে সেক্ষেত্রে সিল্ক, তসর বা এই টাইপ লুঙ্গি পরা হয়৷ তাছাড়া বেশিরভাগ সময় ই আরামের জন্য লুঙ্গি পরা হয় পিউর সুতি গুলোই এবং এগুলোর ই উৎপাদন এ বিপনন হয় সবথেকে বেশি।
তাছাড়া ও ৫০% সুতি এবং ৫০% অন্যান্য সুতা মিক্সড লুঙ্গিও বেশ আরামদায়ক হয়।
সাইজ এর উপর ভিত্তি করেঃ
সাইজ ভেদে ও লুঙ্গি বিভিন্ন ধরনের হয়। কেউ বড় লুঙ্গি পছন্দ করে কেউবা ছোট কেউ আবার মোটামুটি টাইপ। এসবের উপর ভিত্তি করেই লুঙ্গি সাড়ে ৪ হাত বাই আড়াই হাত হয়। সাড়ে ৫ হাত বাই পৌনে তিন হাত হয়,৫ হাত বাই পৌনে তিন হাত এবং ৬ হাত বাই তিন হাত সাইজ এর হয়ে থাকে।
নিজেদের পছন্দ এবং আরাম কে প্রাধান্য দিয়ে সবাই লুঙ্গি কিনে থাকে।
কাউন্ট এর উপর ভিত্তি করেঃ
লুঙ্গির কাউন্ট এর উপর ও ভিন্নতা চলে আসে এবং লুঙ্গি চিকন কিংবা মোটা ও দাম এর তারতম্য ঘটে। কাউন্ট বলতে বুঝায়, যদি ৭০/৭২ কাউন্ট সুতা বুঝকনো হয় তবে এর অর্থ হলোটানায় ৭২ কাউন্ট এবং পোড়েনে বা ববিন কিংবা মাকুতে ৭০ কাউন্ট এর সুতা ব্যবহার করা হচ্ছে।
লুঙ্গির কাউন্ট সাধারণত ৪০ থেকে ৮৪ কাউন্ট হয়৷ কাউন্ট যত বাড়ে, সুতা তত চিকন হয় এবং সুতার দাম ও তত বাড়ে, পরিশ্রম ও অপেক্ষাকৃত বেশি হয়, লুঙ্গি তত সফাত, নরম, মিহি হয়, লুঙ্গি ততই পাতলা হয়, সব মিলিয়ে দাম ও বেড়ে যায়।
আমাদের দেশে সাধারণত এইসব কাউন্ট সুতোর লুঙ্গি হয়।
- ৪০/৪০
- ৪০/৬২
- ৬২/৬২
- ৬২/৮০
- ৮০ /৮০
- ৮৪/৮২
এছাড়া ও তাঁতীদের চাহিদা অনুযায়ী বা সুতা কেনার জায়গার উপর কাউন্ট বেশি হতে পারে।
সানার উপর নির্ভর করেঃ
সানার উপর নির্ভর করেও লুঙ্গির তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। সানা একটি যন্ত্রের নাম যার সুতা নেয়ার ক্যাপাসিটির উপর ও লুঙ্গির দাম নির্ভর করে, লুঙ্গির মান, সাইজ সবকিছুই এর সাথে পরবর্তিত হয়।
যেমন মেশিন এর ক্ষেত্রে ৮০ থেকে ১২০ সানার লুঙ্গি হয়, সর্বোচ্চ ১৩০, কিন্তু তাঁত এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সানা হলো ১৪০ ও ১৬০, কোন কোন ক্ষেত্রে ১৭০।
সানার এ সংখ্যা বাড়তে থাকলে লুঙ্গির দাম বাড়তেই থাকে।
লুঙ্গি কিন্তু নকশার কারণে ও বিভিন্ন রকম হয়। যেমনঃ
- স্ট্রাইপ
- গ্রামীণ চেক
- প্রিন্ট
- বাটিক প্রিন্ট
- লতানো প্রিন্ট
- এক কালার সাথে সামান্য পাড় এ ডিজাইন।
- পাড় এ জরি সুতা
এছাড়াও বিভিন্ন কিছু।
নকশা মন মত না হলে সেই পোশাক পরতে মন টানেনা৷ লুঙ্গির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম না। সবথেকে বেশি বিক্রি হয় এবং সবাই পছন্দ করেন স্ট্রাইপ এর লুঙ্গি। বিভিন্ন কালার এর সংমিশ্রণ এ লুঙ্গির এ নকশা টি ই প্রাধান্য পায় সব সময়।
কেউ ঝকঝকে রঙ বেছে নেন, কেউবা হাল্কা রঙ। বয়সভেদে ও লুঙ্গি পছন্দে তারতম্য চলে আসে৷
এছাড়া ও পাওয়ার লুম, হ্যান্ডলুম এ ভেদে তো লুঙ্গির তারতম্য চলেই আসে।
এমন বেশ কিছু মাধ্যমে লুঙ্গির বিভিন্নতা মিলিয়ে প্রায় ১২৫ টি লুঙ্গির ব্রান্ড গড়ে উঠেছে আমাদের দেশে।
বাংলাদেশ এ বিভিন্ন জেলার লুঙ্গিগুলো খুব খুব জনপ্রিয় এবং অনেক বেশি প্রসিদ্ধ। এই পর্যায়ে জেলাভিত্তিক কিছু লুঙ্গি তুলে ধরবো।
লুঙ্গি এবং কোন অঞ্চল এ ভাবতে গেলেও পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, নরসিংদী এসব এলাকার নাম আসে। যদিও সময়ের সাথে অনেক এলাকায় তাঁত হারিয়ে গেছে, তাঁতীরা অন্যত্র চলে গেছে কিংবা বিভিন্ন কারণেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তারপর ও বিশেষ কিছু এলাকার নাম এর সাথে লুঙ্গি এক হয়েই মিশে আছে।
দোহার এর লুঙ্গিঃ
যন্ত্রসভ্যতার যুগে যেখানে মেশিনে খুব সহজেই একটা লুঙ্গি তৈরি হয়, সেখানে শারীরিক পরিশ্রম করে সারাদিন খাটুনির পর তাঁত এ একটা লুঙ্গি তৈরি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারপর ও ঢাকার দোহার এর রায়পাড়ার তাঁতী পরিবার গুলো তে দেখা যায় রোহিতপুর এর এই লুঙ্গি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা। দেশের ঐতিহ্যবাহী অনেক পণ্যের মত ই দোহার এর লুঙ্গির সুনাম রয়েছে যুগ যুগ ধরে।
এখানের লুঙ্গি তৈরি সম্পূর্ণ হাতে। মিল থেকে সুতা আনা, সুতা ধোয়া, রঙ করা, শুকানো, চরকায় সুতা কাটা, গুটিতে সুতা জড়ানো, একটা একটা করে সুতা বাঁশের ফ্রেমের সাথে জড়ানো, সুতাগুলো সমান করে কাটা, টান টান করে বাঁধা, মাড় দেয়া, সুতা শান দেয়া তারপর তাঁত এ উঠানো এবং তাঁত এ ও নিজেদের ই সব কাজ। এরপর লুঙ্গি প্রস্তুত হলে তা আবার মাড় দেয়া।
প্রতিটা ধাপ এ অনেক পরিশ্রম এর প্রয়োজন হয়৷ পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক খুব ই সামান্য, অনেক সময় লাভ ওর অংশ চোখে দেখেনা, দিনাতিপাত করে এভাবেই, তাই নিজেদের পর্যন্তই এ পেশা টিকিয়ে রাখতে চায়, পরবর্তী প্রজন্ম কে এমন কষ্টের কাজ সাথে সামান্য আয় এ। এ কষ্টের কাজ এ কেউ ই নিজেদের সন্তান কে জড়াতে চায়না৷ এরফলে হাড়িয়ে যেতে বসেছে এই হাতের তাঁত এর দোহার এর লুঙ্গি।
দোহার এর লুঙ্গির গুণমান এর প্রস্তুত প্রক্রিয়ার সাথেই জড়িত। এভাবে হাতে তৈরি করা হয় জন্যই এই লুঙ্গি অনেক আরাম এর এবং টেকসই। এর পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে পারলে, তাঁতীরা স্বচ্ছলভাবে চলবে এমন একটা পর্যায়ে আসলে অবশ্যই এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
সিরাজগঞ্জ এর লুঙ্গিঃ
সিরাজগঞ্জ তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা। এখানের বিভিন্ন উপজেলা জুড়েই রয়েছে তাঁত। এর মাঝে বেলকুচি, রায়গঞ্জ, এনায়েতপুর, শাহজাদপুর অন্যতম।
বিশেষ করে বেলকুচির তামাই গ্রাম এ পুরোটাই লুঙ্গি নির্ভর এবং প্রতিদিন এখানে প্রায় এক লাখ পিস লুঙ্গি তৈরি হয়। নামী দামী বিখ্যাত সব ব্রান্ড এর লুঙ্গি তৈরি হয় সিরাজগঞ্জ এ।
রায়গঞ্জ এর চিত্র ও এমন ই। এখানে ২৫০ তাঁতীর প্রায় দুই হাজার এর ও বেশি তাঁত এ লুঙ্গি তৈরি হয়। প্রতিটি তাঁত এ একদিনে ৫-৬ টি লুঙ্গি তৈরি করা যায়৷ ৬২ কাউন্ট এর সুতায় তৈরি হয় এসব লুঙ্গি তাই গুণ এ যেমন সেরা রঙ এ ও তেমনি পাকা।
সিরাজগঞ্জ এর শাহজাদপুর, সোহাগপুর, এনায়েতপুর এ বসে লুঙ্গির পাইকারি হাট এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে লুঙ্গি কেনাবেচা করা হয়৷ এছাড়াও দেশের বাহির থেকেও তাঁতীরা আসে এখান থেকে লুঙ্গি নিতে৷ বিশেষ করে ভারতের অনেক ব্যবসায়ীরা এখান থেকে লুঙ্গি, শাড়ি নিয়ে নিজেরা ব্যবসা করে ভারতে। দেশ সেরা বেশিরভাগ ব্রান্ড এর লুঙ্গি গুলো চলে যায় এ জায়গা থেকেই। এস আর টেক্সটাইল এর মালিক আব্দুল আজিজ এর মতে, দেশের ৬০ ভাগ লুঙ্গি তৈরি হয় এখানেই।।
গ্রামে গ্রামে সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তাঁত সম্পর্কিত কাজ। কোন অবসর নেই কারোর ই, বাড়ির নারী পুরুষ নির্বিশেষে বিভিন্ন ধাপ এর কাজ সম্পন্ন করে।
বেশিরভাগ সুতা নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রিক। বাজার থেকে সুতা এনে প্রথমেই সেগুলো ধোয়া হয়, ধোঁয়ার কাজ আগে পুরোপুরি হাতে হলেও এখন মেশিন এর ব্যবহার ও আছে, আধাযান্ত্রিক ই বলা চলে, সুতা ধোঁয়া হয়ে গেলে তা রাসায়নিক দ্রব্যের মধ্যে চুবিয়ে রঙ করা হয়। নারী পুরুষ মিলিয়েই এটি সম্পন্ন করে। এদিকে যেহেতু লুঙ্গি বেশি বোনা হয় তাই নীল, সবুজ বা এই ধরণের সুতার প্রাধান্যই বেশি খেয়াল করা যায়। চালের গুড়া, ময়দার গুড়া, এরারুট দিয়ে মাড় দেয়ার কাজ টা সম্পন্ন করে এখানে। এই কাজকে তারা পাড়ি দেয়া বলে। বেশ কঠিন কারণ উল্টাপাল্টা হলেই সুতার মান কমে যায়।
এই ধাপ শেষ হলে চরকাতে সুতা ভরা হয় এবং ববিন এ রঙ বেরং এর সুতা পেচানো হয় এবং ড্রামহুইল এ দেয়া হয় সুতা। এই সব কাজ ই এখন আধাযান্ত্রিক মেশিনেই করা হয়। ড্রামহুইল থেকে সুতা লম্বালম্বিভাবে ছাচ এ দেয়া হয় অর্থাৎ সানা করা।হয় এবং এর পর ই তাঁত এ বোনা হয় লুঙ্গি। বেশিরভাগ তাঁত এ ই চলে খটখটি তাঁত।
সকল প্রসিডিউর আমাদের তাঁতীরা বেশ নিষ্ঠার সাথেই করে থাকে যাতে যুগ যুগ ধরে চলে আসা লুঙ্গীর সুনাম অটুট থাকে।।
পাবনা জেলার লুঙ্গিঃ
আমাদের এ দেশে লুঙ্গির সাথে যেসব জেলার নাম জড়িয়ে আছে পাবনা তার মধ্যে অন্যতম। লুঙ্গি পরতে ভালোবাসেন আর পাবনার লুঙ্গি পরেন নি এমন মানুষ কম আছে হয়তো৷ পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁচকিয়া গ্রামের লুঙ্গি গুণে ও মানে সেরা। এখানে হাতের তাঁত এ তৈরি করা হয় লুঙ্গি। সময় বেশি লাগে, শ্রম বেশি দিতে হয় তাই লাভের মুখ দেখা হয়ে উঠেনা তাঁতীদের।
চাঁচকিয়া ও পার্শ্ববর্তী জালালপুর, গোপালপুর, ধানুয়াঘাট, ষাটগাছা গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ৩০০ তাঁত কারখানা রয়েছে যেখানে ৩০০ তাঁতী প্রায় হাজার এর উপর শ্রমিক ও রয়েছে।। যারা সুতা কিনে আনা, ধোয়া, তেনা কড়ানোচ পেচানো, লুঙ্গি বোনা সবকাজ ই নিজেরাই করে থাকেন৷ একদিনে দুইটা লুঙ্গির বেশি বোনা হয়ে উঠেনা।
এখানে কেনা-বেচা চলে বছর জুড়েই, প্রচুর লুঙ্গি রপ্তানি হয় বিদেশে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই লুঙ্গিগুলোই বর্ডার ক্রস করে চলে যায় এবং পরে অন্য দেশের সীল লাগিয়ে তা বিশ্বের অন্যান্য অনেক প্রান্তে চলে যায়।
পাবনা জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর উপজেলা গুলোও লুঙ্গি তৈরির জন্য খ্যাত। এখানে প্রায় ৫০ হাজার তাঁতী রয়েছে যারা বিভিন্ন ভাবে জড়িত এই লুঙ্গি তৈরির কাজে। কেউবা সুতা রঙ করে, কেউ সুতা শুকায়, কেউ সুতার অন্যান্য প্রসেসিং এ কাজ করে, অনেকেই লুঙ্গি বুননের কাজ করে এবং তাঁত থেকে নামানোর পর তা মোলায়েম করতে ব্যস্ত থাকে অনেক এবং তা ভাঁজ করে রাখার জন্য ও আলাদা লোক থাকে। এভাবে সকলে মিলিত প্রচেষ্টায় একটি লুঙ্গি তৈরি হয়।
এখান থেকে লুঙ্গি চলে যায় ভারতে, পাইকারিরা এসে কিনে নিয়ে যায় এখান থেকে, এছাড়া খুলনা, যশোর, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এ চলে যায় এসব লুঙ্গি। এছায়ারা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এর মাধ্যমে ও অনেক ব্যবসায়ীরা লুঙ্গি পাঠায়৷ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও চলে যায় এখানকার লুঙ্গি।।
কুষ্টিয়া জেলার লুঙ্গীঃ
কুষ্টিয়ার কুমারখালী’র তাঁত শিল্প একনামে প্রসিদ্ধ। যারা তাঁত পেশার সাথে যুক্ত আছেন মোটামুটি সবাই এই এলাকার নাম জানেন। একটা সময় দেশের অনেকাংশে বস্ত্রের জোগান যেত কুষ্টিয়ার কুমারখালীর তাঁতীদের তৈরি বস্ত্র থেকেই, এখন তার পরিমাণ অনেক কমে এসেছে। তবে এখনো এখানকার লুঙ্গি গামছা বাজারে খুব ই সমাদৃত। হস্তচালিত তাঁত, মেশিনতাঁত ব্যবহার করেই তৈরি হয় উন্নতমানের লুঙ্গি। সারাদেশ থেকে পাইকার আসে, বিদেশে ও পাড়ি জমায় অনেক লুঙ্গি এখান থেকে।।। বিভিন্ন ধরণের বিভিন্ন রঙ এর লুঙ্গি তৈরি হয় এসব তাঁত এ৷ স্পেশাল দৌতার লুঙ্গি, চেক লুঙ্গি, ঝুরি চেক লুঙ্গি, জ্যাকেট লুঙ্গি, কটকি পাড় এর লুঙ্গি, কটন এর কয়েকটাইপ লুঙ্গি তৈরি হয় এখানে।
কুমারখালী তে এখন গড়ে উঠেছে কাপড় প্রসেসিং মিল, ডাইং কারখানা এমন অনেক কিছুই গড়ে উঠেছে যা বস্ত্রশিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
নরসিংদী জেলার লুঙ্গীঃ
তাঁতশিল্পে প্রসিদ্ধ নাম নরসিংদী। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর নরসিংদী সহ তাঁত প্রধান এলাকা গুলোতে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। সেই সময় ঘরে ঘরে তাঁত ছিলো নরসিংদী তে এবং তখন গড়ে উঠে নরসিংদীর বাবুরহাট হাট। যেখানে সারাবছর বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি রা এসে কেনাবেচা করে। এখানের গর্ততাঁত এ তৈরি কাপড় সুদূর ইউরোপ পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছে। ৭০ দশকের শেষ দিকে এখানে ঢুকে পরে পাওয়ারফুল, যার ফলে হস্তচালিত তাঁতশিল্পের দূর্দিন শুরু হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে অনেকেই তা আবারো চালু করার চেষ্টা করেছে, অনেকেই পূর্বপুরুষের পেশাকে সন্মান জানিয়ে ও এর সাথে আছে।
রায়পুরার হাইরমারা গ্রামে অনেকেই এখনো হাতের তাঁত কে আকড়ে ধরে আছে। তবে বেশিরভাগ ই শাড়ির পরিবর্তে লুঙ্গি তৈরি করে, কেননা শাড়িতে সুতা বেশি লাগে এবং সময় ও অনেক বেশি লাগে, যাতে তাঁতীরা লাভের মুখ দেখার আশা ও করতে পারেনা। এখানের তৈরি লুঙ্গিগুলো বেশ জনপ্রিয়তা ও লাভ করেছে, আরামকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে এসেছে এই শিল্পকে।
তবে জেলার অনেক জায়গাতেই মেশিন এ তৈরি লুঙ্গির ব্যাপক প্রভাব ও রয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলার লুঙ্গিঃ
তাঁত এলাকা বা তাঁত এর যেকোন পণ্যের নাম আসলেই টাঙ্গাইল জেলার নাম ও নিতেই হয়। তাঁত এর লুঙ্গির ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম না। টাঙ্গাইল এর বিভিন্ন উপজেলাতে লুঙ্গি তৈরি হয়। সংখ্যা হিসেব করলে আগের থেকে অনেক কমে এসেছে কিন্তু তা এখনো সচল আছে বিভিন্ন তাঁত এ।
দুইশো বছর এর পুরনো করটিয়া হাট শাড়ির পাশাপাশি লুঙ্গির জন্য ও প্রসিদ্ধ। হাটবারে কোটি কোটি টাকার লুঙ্গি বিক্রি হয়। ভারত থেকে বহু পাইকার এসে লুঙ্গি নিয়ে গিয়ে নাম পরিবর্তন করে ফেলে।
মাগুরা জেলার লুঙ্গিঃ
তাঁতশিল্পে অন্যতম পুরনো জেলা মাগুরা। যদিও পরিবেশ পরিস্থিতি মিলিয়ে এখন তা অনেকাংশে কমে গেছে তবে কিছু জায়গায় তাঁত এর খটখট শব্দ এখনো সেইসব পাড়াকে মুখরিত করে রাখে। এলহানে নিজনান্দুয়ালী গ্রামে দুই চারটি পরিবার এ এখনো জীবিকা নির্বাহের পথ হয়ে আছে তাঁতশিল্প এবং তারা লুঙ্গি, গামছা তৈরি করে। যাতা, ড্রাম, খোরা, নরাজ, বুয়া, সানা এসব এর সাহায্যে তারা লুঙ্গি বুনে থাকে। স্থানীয় বাজারেই বেশি বিক্রি হয় সেসব লুঙ্গি। বৃহৎ পরিসরে তাদের কেনাবেচা এখন হয়না, তবে সরকারি বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে তারা বড় পরিসরে এ শিল্পকে নিয়ে যেতে পারে৷
বাঞ্চারামপুর এর লুঙ্গীঃ
ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুর উপজেলার রূপসদী ইউনিয়ন এ তৈরি হয় অনেক উন্নতমানের লুঙ্গী। এখানে এক সময় ঘরে ঘরে তাঁত এ বোনা হতো লুঙ্গি। পরে ১৯৯০ সালের পর তাতে ধ্বস নামে৷ তবে ২০০৫ সালের পর তা আবারো প্রাণ ফিরে পায় সেখানকার বেশ কিছু লুঙ্গি ব্যবসায়ী ও কারিগরদের চেষ্টায়।
এখানের লুঙ্গি বাহিরে রপ্তানি করে তাঁতশিল্পের সুনাম বাংলাদেশ এ প্রথম ২০১৬/১৭ তে সিআইপি হিসেবে সরকারিভাবে পুরষ্কৃত হন।।
ঝিনাইদহ জেলার লুঙ্গিঃ
এ তো বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে সমগ্র বাংলাতে ই তাঁত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিছু জায়গায় কম এবং কিছু জায়গায় বেশি তবে আছে বেশিরভাগ জেলাতেই। ঝিনাইদহ জেলাও এর ব্যতিক্রম না। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ জায়গাজুড়েই ছিলো তাঁতশিল্প। এখন অনেকেই এ পেশা ছেড়ে গেলেও এখন যে জায়গাগুলোতে কম পরিমাণে তাঁত আছে তাতে বেশিরভাগ ই লুঙ্গি ও গামছা তৈরি হয়। রঙ সুতা, তুতে, সাবু, মাড়, ময়দা, মাওম, কেরোসিন তেল, জ্বালানি, শ্রমিক মজুরী সব কিছুর সমন্বয়ে তৈরি একেকটি শাড়ি বা লুঙ্গি। এ এলাকার লুঙ্গিগুলোর চাহিদা আছে অন্যান্য জেলায়। এখনো খুলনা, মেহেরপির, যপশোর, চুয়াডাঙ্গা র বিভিন্ন মোকামে তাদের তৈরি বস্ত্র তৈরি হয়।
এই এলাকায় এখনো অনেক সম্ভাবনা আছে, তাঁত আছে হয়তো তা ফেলে রেখেছে তাঁতীরা। এগুলোর সঠিক ব্যবহার করলে তা অবশ্যই উঠে আসতে পারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁতশিল্পের প্রতি নজর দেয়া হচ্ছে তাই অবশ্যই এমন সম্ভাবনাময় জায়গাগুলো এক সময় আবারো রমরমা হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
মুন্সিগঞ্জ জেলার লুঙ্গিঃ
মুন্সিগঞ্জ এর হাওয়াই লুঙ্গির বেশ নাম ডাক আছে, শুধু আমাদের দেশে না বহির্বিশ্বেও। মুন্সিগঞ্জ এর তাঁত এর বিভিন্ন ধরণের বস্ত্রের মাঝে লুঙ্গি ও একটি৷ আগে যেখানে উন্নতমানের শাড়ি হতো বা বিভিন্ন কিছুই হতো এখন শুধু লুঙ্গি হয়। এক দিনে যদি একটানা কাজ করা হয় তবে ৫ পিছ লুঙ্গি তৈরি করতে পারে তাঁতী আর এসব বেশিরভাগ ই স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হয়ে যায়।
মুন্সিগঞ্জ এর শ্রীনগর উপজেলায় বাড়ৈখালী ইউনিয়ন এ এখনো কিছু পরিবারে তাঁত রয়েছে, তারাই মূলত লুঙ্গী তৈরি করে থাকে।
আধুনিক যন্ত্রপাতির যুগে হাতের তাঁত পাল্লায় পিছিয়ে গেলেও মান এর জন্য টিকে আছে, তবে এখানকার তাঁতীরা নিজেও সংকট এর মুখে আদৌ তারা পেরে উঠবেন কি না কেননা হাতের তাঁত মানেই সময় বেশি, খরচ বেশি।
কুমিল্লার খাদি লুঙ্গিঃ
খাদি আমাদের ঐতিহ্য। এই খাদির সাথে রয়েছে আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আবেগ এর সম্পর্ক। খাদির ব্যাপক প্রচলন অনেও দিন আগে থেকে থাকলেও মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশী আন্দোলন এর পর তা অনেক বেশি জোরালো হয়৷ খাদির ব্যবহার তখন বাড়তে থাকে কারয়ান মহাত্মা গান্ধী তখন বিদেশী পণ্য বর্জন এর ডাক দেন৷ সেই সময় তিনি নিজেও কুমিল্লার অভয়াশ্রমে খাদি বোনানো শিখিয়েছিলেন। সুনাম অর্জন করেছিলেন এবং ব্যাপক প্রসার ও হয়েছিলো তখন খাদির৷ সেই খাদি কাপড়ের লুঙ্গি ও হয়, এখন আর এমনটা নেই যে খাদি মানেই মোটা কাপড়। সুন্দর মসৃণ অন্যান্য পোশাকের সাথে লুঙ্গি ও খাদিতে অন্যতম জায়গা করে নিয়েছে। খাদির এক কালার, পাড় এ ডিজাইন, স্ট্রাইপ সহ বিভিন্ন ধরণের লুঙ্গি তৈরি হয় খাদির মাঝে৷
লুঙ্গি তৈরির এইসব জেলার নাম বারবার উঠে আসলেও সারা বাংলাদেশ এ এমন অনেক জেলা আছে যেখানে লুঙ্গি তৈরি হয়। বাংলাদেশ এর ৬০ টি জেলায় তাঁত আছে৷ এসব জেলার মাঝে বেশিরভাগ জেলার তাঁত এর ই খারাপ অবস্থা। যার কারণে অনেক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক তাঁত এলাকায় শাড়ি তে অত্যধিক খরচ জন্য শাড়ি বাদ দিয়ে লুঙ্গি ও গামছা তৈরি হয়।
২০১৯ সাল থেকে রাজিব আহমেদ, ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ( ই-ক্যাব) দেশী পণ্যের ডাক দেন এবং ২০২০ সালে আরিফা মডেল প্রবর্তন করেন। এ মডেল এর লক্ষ্য অনুযায়ী নিজ নিজ জেলার পণ্য তুলে ধরেন অনেক উদ্যোক্তা ও সাপোর্টার রা৷ এর ই রেশ ধরে দেখা যায় ফরিদপুর জেলায় লুঙ্গি তৈরি হচ্ছে হাতের তাঁত এ, কিম পরিমাণ হলেও তা এখনো উজ্জীবিত আছে। বগুড়া জেলার শাইওল গ্রাম, সময় খানে গার্মেন্টস এর ঝুট সুতা থেকে বিভিন্ন ধরণের পণ্য তৈরি হয়, এখানে লুঙ্গিও তৈরি হয়। এছাড়া মানিকগঞ্জ এর তাঁত এ ও তৈরি হয় উন্নতমানের হালকা ডিজাইন এর বিভিন্ন রঙ বেরং এর লুঙ্গি।
বিভিন্ন আদিবাসী রা তাদের নিজেদের পোশাক নিজেরাই তৈরি করেন এবং লুঙ্গির মত পোশাক ও তৈরি করে থাকে।
ছোট ছোট সংখ্যা পরিমাণ তাঁত যেসব এলাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় ভাবে বাজারজাত হয়৷ তাছাড়া বড় বাজার গুলোতে হাট বার এ তো দূর দূরান্ত থেকে অনেক মানুষেরা জমায়েত হয় লুঙ্গির কেনাবেচার উদ্দেশ্যেই।
শেষমেশ এটা অবশ্যই বলতে হয় যে, আপাতদৃষ্টিতে লুঙ্গি পড়তে কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করলেও লুঙ্গির ব্যবহার বাড়ছে এবং করোনাকালে ঘরবন্দী থাকাতে সে বছর বেড়েছিলো অনেক লুঙ্গির চাহিদা৷ তাছাড়া ও প্রতিনিয়ত লুঙ্গি বিদেশে রপ্তানি ও হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় এটি আমাদের অন্যতম সম্ভাবনাময় একটি পণ্য, যার উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেক বেশি ভালো করা সম্ভব। রুট মূল এর তাঁতীরা যাতে বঞ্চিত না হয় সেদিকেটা বিবেচণা করা প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের, তাহলেই একেবারে তাঁতীরা সুবিধাবঞ্চিত হবেনা, এর ফলে আমাদের তাঁত এর লুঙ্গি আরো ব্যাপক আকারে বিস্তৃতি লাভ করতে পারবে কেননা মানের দিক থেকে আমাদের দেশি লুঙ্গি সেরা।
লেখিকাঃ
গুগলে লুঙ্গি নিয়ে সার্চ করতে গিয়ে আপনার এই লেখাটি সামনে চলে আসে আপু।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে অসাধারণ একটি আর্টিকেল লেখার জন্য।