জিআই পণ্যের আবেদন পদ্ধতি (নমুনা সহ)

কনটেন্ট লেখক মোঃ দেলোয়ার হোসেন
মোঃ দেলোয়ার হোসেন

জিআই পণ্যের আবেদন পদ্ধতি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রথমে একটা চেকলিস্ট তৈরি করে নিতে হবে এবং সেই আলোকে একটা একটা কাজ এগিয়ে নিলে পুরো আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে। এই আর্টিকেলে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করবো জিআই পণ্যের আবেদন প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়। তালিকা তৈরি করার মাধ্যমে শুরু করছি আজকের আর্টিকেল।

এক পৃষ্ঠার আবেদন ফরম

কোন পণ্যের জিআই স্বীকৃতি অর্জন করার ইচ্ছা পোষণ করলে যথাযথ কাগজপত্র অনুযায়ী প্রথমে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)-এর মহাপরিচালক বরাবর জিআই পণ্যের আবেদন প্রেরণ করতে হয়। ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বিধিমালা, ২০১৫ এর ধারা ৪ এর (১) এ বলা হয়েছে, “জিআই ফরম ১ বা ক্ষেত্রেমত, জিআই ফরম ২ পূরণ করিয়া উহার তিন কপি রেজিস্ট্রারের নিকট দাখিল করিতে হইবে।”

সহজ করে বললে, যে পণ্যের আবেদন করা হবে তা আন্তর্জাতিক শ্রেণি অনুযায়ী এক শ্রেণির হলে জিআই ফরম-১ এবং দুই শ্রেণির হলে জিআই ফরম-২ পূরণ করে আবেদন করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, ১ পৃষ্ঠার ফরমে আবেদন সম্পন্ন করতে হয়। ফরমগুলো ডিপিডিটির ওয়েবসাইটে (https://www.dpdt.gov.bd/site/page/68aa2dfd-ce5e-43dc-a08a-86e4e95b2f9b/- ) পাওয়া যাবে। ডিপিডিটি ওয়েবসাইট থেকে ফরম ডাউনলোড করার পর সামান্য আপডেট করার প্রয়োজন হতে পারে। তাই দুইটি ফরমের চূড়ান্ত নমুনা সংযুক্ত করা হলো:

জিআই ফরম-১ নমুনা
নমুনা : জিআই ফরম-১

এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি পাওয়া এক শ্রেণি পণ্যের মধ্যে জামদানি শাড়ী, শেরপুরের তুলশীমালা চাল, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, কাটারিভোগ চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি উল্লেখযোগ্য।

জিআই ফরম- ২ নমুনা
নমুনা : জিআই ফরম- ২

কুমিল্লার রসমালাই, মুক্তাগাছার মন্ডা, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, কুমিল্লার রসমালাই, জামালপুরের নকশিকাঁথা, টাঙ্গাইল শাড়ি ইত্যাদি পণ্যগুলো দুই শ্রেণির পণ্য।

তিন পৃষ্ঠার হলফনামা

এই পণ্যের জিআই স্বীকৃতি চেয়ে কে আবেদন করছেন? তার বিস্তারিত তথ্য যেমন: নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, পেশা, বয়স, ধর্ম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সহ বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করে তিনি কিভাবে এই পণ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন এর বর্ণনা দিয়ে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৫ -এর বিধি ৯(চ) মোতাবেক ১০০ টাকা মূল্যের ৩টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা প্রদান করবেন। জিআই পণ্যের আবেদন ফরমের সাথে ডিপিডিটি মহাপরিচালক বরাবর কি কি প্রেরণ করছেন তা উল্লেখ করতে হবে যেমন : উৎপাদন অঞ্চল, মানচিত্র, উৎপাদন পদ্ধতি, পণ্যের নাম, প্রকার, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি। এছাড়াও দুইজন স্বাক্ষীর নাম, পদবী, সীল (যদি থাকে) সহ হফলনামা নোটারী পাবলিক করতে হয়।

ডকুমেন্টেশন

ডকুমেন্টেশন জিআই পণ্যের আবেদন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ডকুমেন্টেশন যত সমৃদ্ধ হবে পণ্যটি জিআই স্বীকৃতির জন্য মননীত হওয়ার ততটুকু পথ এগিয়ে থাকবে। এই ডকুমেন্টেশন একজন আবেদনকারীর হয়ে পরিক্ষকের কাছে সুপিরশ করে। সকল তথ্য উপাত্ত পরিক্ষকের মনে ধরলে তারা এই ডকুমেন্টেশনটি জার্নালে প্রকাশ করেন। তাই একটা পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ডকুমেন্টেশনে গুরুত্ব দেওয়া সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ডকুমেন্টেশন দূর্বল হলে ডিপিডিটি থেকে চিঠির মাধ্যমে তা সমৃদ্ধ করার জন্য জানানো হয়। যথা সময়ে চিঠির জবাব না আসলে বা তথ্য অসম্পূর্ণ থাকলে বাছরের পর বছর ধরে পণ্যটি স্বীকৃতির অপেক্ষায় পরে থাকতে পারে। ডকুমেন্টেশন তৈরি করার বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

পড়ুন : জিআই যোদ্ধা তাঁরা: কী করেন, কীভাবে করেন

প্রথম আলো

নিবন্ধন ফি ও ভ্যাট

জিআই পণ্যের আবেদন করার জন্য ডিপিডিটি বরাবর নির্ধারিত ফি ব্যাংক ড্রাফট অথবা পে অর্ডার করতে হয়। এক শ্রেণির পণ্যের জন্য ১৫ হাজার টাকা এবং দুই শ্রেণির পণ্যের জন্য ৩০ হাজার টাকা ফি প্রদান করতে হয়।

পে অর্ডার: মহাপরিচালক প্যাটেন্ট, শিল্প-নকশা, ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর, শিল্প মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

আবেদন ফি এর ১৫% হারে ভ্যাট প্রদান করতে হয় নির্দিষ্ট কোডে। এখানে উল্লেখ রাখা প্রয়োজন প্রত্যেক জেলার আলাদা আলাদা ভ্যাট কোড রয়েছে। সেই কোডে ভ্যাটের অর্থ প্রেরণ করলে ডিপিডিটি থেকে তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তাই নির্দিষ্ট কোড ব্যবহার করা শ্রেয়।

ভ্যাট কোড : ১১১ ৩৩০ ০১০ ০৩১১

জিআই পণ্যের ভ্যাট চালানের নমুনা
জিআই পণ্যের ভ্যাট চালানের নমুনা

পণ্যের ছবি ও নমুনা

যে পণ্যের জিআই স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করা হয় সেই পণ্যের ৫টি সাদা কালো ছবি এবং ৫টি রঙিন ছবি প্রদান করতে হয়। সেই সাথে পণ্যের পাঁচটি নমুনা প্রদান করতে হয়। তবে যদি পণ্যটি পচনশীল হয় যেমন: ফল, মিষ্টি কিংবা মাছ জাতীয় তাহলে পণ্যের নমুনা প্রেরণ করতে হয় না। কিন্তু ল্যাব প্রিন্ট প্রদান করা আবশ্যক।

মানচিত্র

জিআই পণ্যের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ডকুমেন্টেশনের সাথে এই পণ্যের উৎপাদন এলাকা ও বাণিজ্যিক এলাকার সত্যায়িত মানচিত্র প্রদান করতে হয়। অর্থাৎ পণ্যটি যে জেলায় উৎপাদন হয় সেই জেলার মানচিত্রের মাঝে শুধু উৎপাদন এলাকাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। পক্ষান্তরে বাণিজ্যিক এলাকার মানচিত্রের জন্য যেসব অঞ্চলে পণ্যটি বিক্রয় করা হয় সেই সব অঞ্চল উল্লেখ পূর্বক বাণিজ্যিক এলাকার মানচিত্র প্রেরণ করতে হবে।

মৌলভীবাজারের আগর আতর
মানচিত্র: মৌলভীবাজারের আগর আতর উৎপাদন এলাকা। ছবি: ডিপিডিটি – জার্নাল নং-২৫

টিপস: এই চেকলিস্ট অনুসরণ করে সব কিছু প্রস্তুত হয়ে গেলে মূল কপিসহ মোট পাঁচ কপি ডিপিডিপি বরাবর প্রেরণ করতে হয়। শুধু আবেদন ফরম ৬ কপি নিয়ে আসতে হয়। অতিরিক্ত এক কপি রিসিভিং কপি অথবা ফরওয়ার্ডিং কপি হিসেবে আবেদন কারীর কাছে ডিপিডিটি থেকে প্রেরণ করা হয়।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, আওয়ার শেরপুর।

2 thoughts on “জিআই পণ্যের আবেদন পদ্ধতি (নমুনা সহ)”

  1. খুবই কঠিন একটা প্রক্রিয়া সহজ করে উপস্থাপন করেছেন। এ জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

Write your comment

Scroll to Top