নারী কিংবা পুরুষ নিজেদের পরিপাটি দেখতে পছন্দ করেন সকলেই। পোশাকের ব্যাপারে সচেতন সবাই তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে। পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ত্ব ফূটে উঠে এবং উৎসব যাই হোক আউটফিট হতে হবে নজড়কারা। শার্ট, গেঞ্জি, ব্লেজার যাই বলিনা কেন পাঞ্জাবি ছাড়া ছেলেদের উৎসব যেন জমে উঠেনা। মুসলমানদের ইদ, হিন্দুদের পূজা বা অন্যান্য যেকোন ধর্মীয় উৎসব থেকে শুরু করে পহেলা বৈশাখ, বিয়ে বা যেকোন ধরনের আচার অনুষ্ঠানে পাঞ্জাবি কে বেছে নেন এমন পুরুষের সংখ্যা ই বেশি৷ ইভেন কিছুদিন আগে এবারের রোযার ইদের ইদ কেনাকাটায় একক পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবির সবথেকে বেশি বিক্রি ই বলে দেয় যে সাজ পোশাকে যাই হোক পাঞ্জাবির প্রাধান্য কতটা বেশি।
ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে আমাদের পাঞ্জাবি। আমরা চারপাশে নিত্যনতুন পাঞ্জাবি দেখি৷ সব সময় ই এই পোশাকটি রুচিশীল সকলের পছন্দের জায়গা জুড়ে থাকলেও পাঞ্জাবি বিষয়ে আমরা অনভিজ্ঞ ই বলা চলে। পাঞ্জাবি নিয়ে তেমন কোন ধারণা ও নেই আমাদের। এই ব্যাপার টা য় গ্যাপ পূরণে এই আর্টিকেল টা লেখা।
পাঞ্জাবি শব্দটির সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পাঞ্জাব সম্প্রদায়ের কথা। যাদের ভাষা পাঞ্জাবি। ইভেন পৃথিবীতে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের ভাষা এই পাঞ্জাবি ভাষা। পাঞ্জাব সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ পোশাকের নামেই পাঞ্জাবি নামকরণ শুরু। তবে পাঞ্জাবি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজেদের পোশাক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমাদের দেশেও পুরুষ দের পোশাক মানেই পাঞ্জাবি প্রাধান্য পায় সবক্ষেত্রে।
একেবারে শুরু তে কেমন ছিলো এই পোশাক?
শুরুর দিকে শুধুমাত্র আয়তাকার দুটো টুকরো দিয়ে তৈরি ছিলো এ পোশাক যার সামনের পার্ট খোলা ছিলো। তখন অবশ্য গলার নীচে বোতামের পাশ দিয়ে সুন্দর সোনা রূপার চেইন পরতো পুরুষ রা যা ঐতিহ্যের বাহক ছিলো৷ পাঞ্জাবদের এই পোশাকটি ই পাঞ্জাব অঞ্চলে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে বিভিন্নভাবে এবং তা হাঁটুর নীচ পর্যন্ত পরে যায়। যদিও তখনকার আর এখনকার পাঞ্জাবির মধ্যে অনেক পার্থক্য কিন্তু অবয়বে অনেক টা মিল। সেই সময় তারা সেলাইবিহীন পোশাক পরতো, কারণ তখন পোশাকে সেলাই করা কে অপবিত্র মনে করা হতো।।।
১৭০৯ থেকে ১৭৪৯ এর মাঝামাঝি সময়ে মণিপুর এর রাজা গরীবে নেওয়াজ আসামে পাঞ্জাবি কুর্তার প্রচলন ও শুরু করেছিলেন। ১৯৬০ এর দিকে যা মধ্যপ্রদেশে চলে আসে। ভারতে উত্তর ভারত বিশেষ করে রাজস্থান এর দিকে বেশি জনপ্রিয় থাকলেও পরবর্তী তে বিভিন্ন রাজ্য গুলোতে সুনামের সাথে এই পোশাক পরিধান করা হয়। এখন তো এটা সংস্কৃতির সাথেই মিশে গেছে। পরিবর্তন হয়েছে অনেক, ডিজাইন এ রকমফের এসেছে কিন্তু পাঞ্জাবি তার নিজস্ব একটি জায়গা করে নিয়েছে।
পাঞ্জাবি কারো ঘরে নেই এমনটা ভাবাই যায়না, কিন্তু সেই পাঞ্জাবি সম্পর্কে কিছুই জানিনা আমরা। পাঞ্জাবী কত ম্যাটেরিয়াল এর হয় কিংবা আমাদের দেশে কোন ধরানের পাঞ্জাবি পাওয়া যায় বা পাঞ্জাবির বিশাল চাহিদা কে সামনে রেখে এটিই আমাদের বিশাল একটি সেক্টর হতে পারে সেসব নিয়ে কোন আগ্রহ হয়তো ছিলোনা কিন্তু ২০১৯ এর শেষ থেকে যখন ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদ দেশী পণ্য নিয়ে চেষ্টা শুরু করলেন তখন থেকে দেশীয় অনেক পণ্য উঠে আসে এবং এ চেষ্টা এখনো চলমান। তার ই রেশ ধরে জানার চেষ্টা করি পাঞ্জাবি নিয়ে। নিজেও জানতে গিয়ে অবাক ই হই এত এত ম্যাটেরিয়াল একটা পোশাকেই৷ এক পাঞ্জাবির কত রকমফের ই না হতে পারে। যদিও এটা শেষ না কেননা এর বাহিরে অনেক পাঞ্জাবি ই থাকতে পারে যা নিয়ে আগ্রহী হলে ভবিষ্যতে আমরা জানতে পারবো ইন শা আল্লাহ । বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নেয়া পাঞ্জাবির রকমফেরঃ
- অক্সফোর্ড কটন
- অ্যান্ডি কটন
- অরবিন্দ
- আড়ং পাঞ্জাবি
- ইয়াগ রোলেক্স
- এমব্রয়ডারি
- এম্বুশ
- কাতান
- কাবলি পাঞ্জাবি
- কারচুপি কাজের
- কাশ্মির সিল্ক
- কাসিস
- কোটি পাঞ্জাবি
- কটন শর্ট পাঞ্জাবি
- ক্ল্যাসিক কটন
- কুশান
- খাদি
- খাদি তে জামিদানী
- খানশা
- খেশ
- চেক পাঞ্জাবি
- জামেবার
- জামদানী তসর
- জামদানী সুতি
- জামদানী হাফসিল্ক
- জ্যাকার্ড কটন
- জুব্বা
- জয়শ্রী সিল্ক
- টিজি মটকা
- টিবি কাপড়
- টিস্যু কাতান নেট
- ডিজিটাল প্রিন্ট
- ডেনিম
- তসর
- দুলহান
- ধুপিয়ান সিল্ক
- নকশী কাঁথার কাজ
- পাইপিন
- পাইপিন দেয়া
- পাকিজা কটন
- পাটের সুতি
- পাটের হাফসিল্ক
- পেঁয়াজ কটন
- প্রিন্টেড পাঞ্জাবি
- বঙ্গবন্ধু ধুতি
- বাটিক
- বার্মিজ কাপড়
- বালুচরে নান্দনিক
- বম্বে সিল্ক
- ব্লক প্রিন্ট
- ভিসকস
- ভয়েল
- মখমল
- মখমল বা কাতান কাপড়ের প্যাচওয়ার্ক
- মাদানি পাঞ্জাবি
- মালাই কটন
- মিক্স কটন
- মসুরি প্রিন্ট
- মসলিন
- রেমি কটন
- লং পাঞ্জাবি
- লিনেন
- শামু কটন
- শাহজাদা
- শেরওয়ানি
- সামু সিল্ক
- সিল্ক কটন
- সিল্ক কটন এ বিভিন্ন কাজ
- সেমি লিং পাঞ্জাবি
- সুতি
- সফট কটন
- স্ল্যাব কটন
- সুলতানের কটন
- হ্যান্ড স্টিচ
- হ্যান্ডপেইন্ট
পাঞ্জাবি নিয়ে লিখতে গিয়ে বারবার বিয়েতে বরের পোশাকটা র কথা ই মনে পরছে। বিয়েতে কনের পাশে নিজেকে গর্জিয়াস ভাব আনার জন্য অনেকেই যেমন শেরওয়ানি পরেন তেমনি অনেকেই গর্জিয়াস পাঞ্জাবি। সুতি, বা সিল্ক কাপড়ভেদে সৌন্দর্য ফুটে উঠে। তবে বিয়ের পাঞ্জাবি গুলোতে সুন্দর কারচুপি বা জারদৌসি কাজ করা থাকে৷ অনেকে ডিজাইনার পাঞ্জাবি তৈরি করে নেন কোন ডিজাইনার এর কাছে তবে ঘুরে ফিরে পাঞ্জাবি থাকবেই৷৷
সুতি পাঞ্জাবিঃ
সুতি কাপড়ের চাহিদা সব সময়, সব ঋতুতে সমান। প্রাকৃতিক তন্তু থেকে তৈরি আমাদের দেশের সুতি কাপড় ই সারাবিশ্বে দাপটের সাথে রাজ করতো কিন্তু এখন তা অনেক ম্যাটেরিয়াল দিয়ে সেই জায়গাটা না থাকলেও এখনো যেকোন পোশাকের মতই সকলের পছন্দের জায়গাতেই আছে। সুতি কাপড়ে যেকোন ধরণের ইনোভেশন আনা খুব ই সহজ হয় সুতি’র প্রিন্ট কাপড়ের পাঞ্জাবী বা সুতিতে স্ট্রাইপ এই পাঞ্জাবি গুলো পরতে ছেলেরা খুব আরাম ফিল করেন। আর এখন তো বিভিন্ন ট্রেন্ড এর মাঝে একটি ট্রেন্ড হলো পরিবারের সাথে মিলিয়ে পাঞ্জাবি পরা৷ সেক্ষেত্রেও সুতি ফেব্রিক এ হ্যান্ডপেইন্ট, হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, এম্বুশ, কাঁথাস্টীচ, বিভিন্ন মোটিফ এ ব্লক সবকিছুতে ই পাঞ্জাবি দারুণ সুন্দর হয়ে ফুটে উঠে।
তাছাড়া ও ভয়েল সুতি যা বেশ হালকা ওজনের হয়। এগুলোর প্রিন্ট বা এক কালার পাঞ্জাবি ও পছন্দ করেন ছেলেরা। সাধারনত ৬০-/৬৪ কাউন্ট সুতা ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হয় সুতি ভয়েল।
সুতির সাথে মিক্সড বিভিন্ন সুতার মিশ্রণের কাপড় গুলো তো আছেই। সব মিলিয়ে ই আরামের দিক চিন্তা করলে আসলে ঘুরে ফিরে সুতি উইশ লিস্ট এ থেকেই যায়। সুতি শুধু হালকা হয় তেমন না সুতির সাথে যেকোন ইনোভেশন এত সহজে ফুটে উঠে যে সুতি নরমাল যারা সব সময় পাঞ্জাবি পরেন সেই জায়গা থেকে শুরু করে পার্টি, প্রোগ্রাম ,বিয়ে সব ধরণের উৎসবে মানানসই এর মত বিভিন্ন ধরনের পাঞ্জাবি সব সুতির বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল এ করা সম্ভব হয়। যার সব শুধু নিজেদের প্রেফারেন্স এর উপর ই নির্ভর করে।
জামদানী পাঞ্জাবিঃ
জামদানী শাড়ি আমাদের সবার পছন্দের শীর্ষে এবং জামদানী মানেই আমাদের গৌরব এর ও জায়গা জামদানী শুধু শ্বড়ি তে সীমাবদ্ধ না থেকে জামদানীর বিভিন্ন পণ্য আমরা পাই এখন। জামদানী থ্রিপিস, ব্যাগ, পর্দা, কুশন এমন বিভিন্ন কিছু। পাঞ্জাবি তে ও জামদানী তার স্বাক্ষর রেখেছে। জামদানী নকশা টা ই এমন যে এর সাথেই আমাদের আবেগ। জামদানী শাড়ি’র সাথে জামদানী ম্যাচিং পাঞ্জাবি ও পরতে দেখা যায় এখন যা সত্যিই মুগ্ধ করে সবাইকে এবং ভীষণ ভালো লাগে দেখতে৷
জামদানী বলতেই নারায়ণগঞ্জ এর রূপগঞ্জ চলেই আসে কারণ এটাই জামদানী পল্লী। রূপগঞ্জ এর জামদানী বিশ্বখ্যাত। এখন সেখানে জামদানী পাঞ্জাবি ও তৈরি হয়। জামদানী পাঞ্জাবির বিভিন্ন রকমফের ও রয়েছে।
পিউর কটন
তসর কটন
খাদি
পিউর কটনের জামদানী পাঞ্জাবি তে তানা ও বাইনের সুতা থাকে সুতি সুতা।
লেখিকাঃ