৫১ রকম দেশি শাড়ি

৫১ রকম দেশি শাড়ি

বাংলাদেশে অগণিত দেশি তাঁতের শাড়ি উৎপাদন হলেও সেখান থেকে ৫১ রকম দেশি শাড়ির ছবি ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হয়েছে।

৫১ রকম দেশি শাড়ি

১. মানিকগঞ্জের কটন চুমকি শাড়ি

এই শাড়িটি মানিকগঞ্জ এর তাঁতিদের হাতে বুনা শাড়ি। সুতি শাড়িতে স্ট্রাইপ, স্ট্রাইপের মধ্যে চুমকি বসানো। পাড় টা প্লেইন এবং জমিন ও প্লেইন তার মাঝে মাঝে চুমকি স্ট্রাইপ করা।

মানিকগঞ্জের কটন চুমকি শাড়ি
মানিকগঞ্জের কটন চুমকি শাড়ি

২. হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ি

বাংলাদেশে হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ির ঐতিহ্য রয়েছে। এর বৈশিষ্ট্য হলো যেকোন এক কালার শাড়িতে হাতে আঁকা হয়ে থাকে।আমাদের বাংলাদেশে হ্যান্ড পেইন্ট  পটুয়া কামরুল হাসান এর হাত ধরে এসেছে। তিনি তার পেইন্টিং এর মাধ্যমে গল্প তুলে ধরতেন যার পারিবারিক, সামাজিক, এবং রাজনৈতিক দৃশ্যপট। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে হ্যান্ড পেইন্ট পোশাক কে সামনে নিয়ে আসেন রাজশাহীর কাজি রকিব এবং মাসুদা কাজী দম্পতি। বাংলাদেশে প্রথম হ্যান্ড পেইন্টের প্রচলন হয় প্রয়াত ডিজাইনার, আর্টিস্ট শাহরুখ শহীদের মাধ্যমে ১৯৯০ সালের দিকে। তিনি  হাতে আকা শাড়ি করেন ১৯৯৪ সালে। হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি জি আই হতে পারে। এক কালার শাড়িতে হ্যান্ড পেইন্ট এর মাধ্যমে ভ্যালু এড হয়। অধিকাংশ নারী হ্যান্ড পেইন্ট শিল্পীদের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।

হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ি
হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ি

৩. অ্যান্ডি হাফসিল্ক

এই শাড়ি গুলো সুতি ও রেশম সুতায় বোনা হয় এবং পুরো শাড়ি এক রঙের হয়, মাঝারি চিকন পাড় জমিন রঙের হয়। আঁচল হয় সোনালী সুতি সুতায় অথবা অন্য রঙের সুতি সুতায়। এই শাড়ি গুলোর মধ্যে কিছু কিছু শাড়িতে চুমকি বসানো থাকে। কিছু শাড়িতে থাকে না।

অ্যান্ডি হাফসিল্ক
অ্যান্ডি হাফসিল্ক

৪. হাফ পাটি শাড়ি

হাফসিল্ক সুতার তৈরি হাফপাটি শাড়ি। শুধু পাড়ের অংশটুকু পাটি বৈশিষ্টে বোনা হয় বলে একে হাফপাটি শাড়ি বলা হয়। টাংগাইল ও মানিকগঞ্জ জেলায় এ শাড়ি গুলো বেশি হয়। শাড়ি গুলো পরতে খুবই আরামদায়ক এবং সহজেই পরিধান করা যায়। দামে সাশ্রয়ী বলে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় বেশি ।

হাফ পাটি শাড়ি
হাফ পাটি শাড়ি

৫. মানিকগঞ্জের হাফসিল্ক সট্রাইপ শাড়ি

মানিকগঞ্জ এর সাটুরিয়ার তাঁত পল্লীর শাড়ি।হাফসিল্ক সুতায় বুনা। চিকন পাড়ের শাড়িটি কুচিতে স্ট্রাইপ, বডি প্লেইন।এই শাড়িগুলো বেশ আরামদায়ক।

মানিকগঞ্জের হাফসিল্ক সট্রাইপ শাড়ি
মানিকগঞ্জের হাফসিল্ক সট্রাইপ শাড়ি

৬. পাটের শাড়ি

এ শাড়ি গুলো সাধারনত মানিকগঞ্জের তাঁতে তৈরি হয়ে থাকে। পিওর কটন সুতার মধ্যে পাটের সুতায় স্টাইপে তৈরি করা হয় বলে এই শাড়ি গুলো কে পাটের শাড়ি বলা হয় । এই শাড়ির অনন্য বৈশিষ্ট্যই হলো পাটের সুতা ব্যবহার করা হয়।

পাটের শাড়ি
পাটের শাড়ি

৭. সিরাজগঞ্জের ধুপিয়ান সিল্ক শাড়ি

হাফসিল্ক এবং রেয়ন সুতায় বোনা শাড়ি গুলোকে ধুপিয়ান সিল্ক শাড়ি বলা হয়। এই শাড়ি গুলো সাধারনত জমিনে এক কালার হয় এবং পাড় আঁচল স্ট্রাইপের হয়ে থাকে। ধুপিয়ান শাড়ি গুলো খুব সফট এবং আরামদায়ক হয়। খুব সহজে পরিধান করা যায় যার ফলে বেশ পছন্দের সকলের এই ধুপিয়ান শাড়ি।

সিরাজগঞ্জের ধুপিয়ান সিল্ক শাড়ি
সিরাজগঞ্জের ধুপিয়ান সিল্ক শাড়ি

৮. হাফসিল্ক পিনন শাড়ি

চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘পিনন-হাদি’। এই পিনন-হাদি’র রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয় নকশা। জনপ্রিয়তার কারণে এই নকশার আদলে বর্তমানে শাড়ি বোনা হয় সেই শাড়িকেই ‘পিনন শাড়ি’ বলা হয়। বর্তমানে পিনন শাড়ির বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিভিন্ন বয়সের নারীদের কাছে।

হাফসিল্ক পিনন শাড়ি
হাফসিল্ক পিনন শাড়ি

৯. টাঙাইলের কটকি শাড়ি

বাংলাদেশের অনন্য একটি নকশার শাড়ি কটকি। কটকির জ্যামিতিক নকশা কটকি শাড়ির মূল আকর্ষণ। তবে এই নকশা করতে অনেক শ্রম দিতে হয় তাঁতীদের৷  সুতা রঙ করার সময় এর কটকি নকশা উঠে যায়, সুতা দুই ইঞ্চি পরপর স্কচটেপ দিয়ে বেঁধে ডায়িং করা হয়, এর ফলে যেখানে যে রঙ যতটুকু লাগবে তা রং করা হয়, মাঝে স্কচটেপ করা অংশ সাদা থেকে যায়। তৈরি হয় সুন্দর কটকি র নকশা। কটকি তে এমন হাফসিল্ক হয়, তেমনি ফুল সিল্ক হয়, মাসলাইস কটকি হয় এবং সুতি কটকি ও হয়৷ এটি অনন্য একটি শাড়ি যা শুধুই বাংলাদেশের এবং এটি জিআই হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

টাঙাইলের কটকি শাড়ি
টাঙাইলের কটকি শাড়ি

১০. অ্যান্ডি কটন

এটি বাংলাদেশের তাঁতের সুতি শাড়ি। মূল বৈশিষ্ট্য হলো দুই রঙের পাড় থাকে, অ্যান্ডি আঁচল অর্থাৎ শাড়ির জমিনের ভিন্ন রঙের আঁচল হয়। বেশিরভাগ সময় সোনালী সুতি সুতার আঁচল হয়।

অ্যান্ডি কটন
অ্যান্ডি কটন

১১. টাংগাইলের খেশ

বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় খেশ শাড়ি তৈরি হয়ে থাকে। পুরাতন কাপড়ের ফালি ব্যবহার করে খেশ শাড়ি তৈরি হয়।খেশের সাথে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সম্পৃক্তা রয়েছে। বর্তমান সময়ে খেশ শাড়ির বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। খেশ শাড়ির মুল বৈশিষ্ট্য হলো পুরাতন কাপড়ের ফালি এবং এই ফালিগুলো সট্রাইপ হয়।

টাংগাইলের খেশ
টাংগাইলের খেশ

১২. টাংগাইল জ্যাকার্ড নকশী পাড়

জ্যাকার্ড হলো নকশা তোলার একটি যন্ত্রাংশ যার সাহায্যে শাড়িতে নকশা তোলা হয়।টাংগাইলের এই শাড়িটির মুল বৈশিষ্ট্য হলো সুতি সুতায় বুনা তাঁতের শাড়ি। শাড়িটির শত বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। শাড়িটি জি আই পণ্য হতে পারে।

টাংগাইল জ্যাকার্ড নকশী পাড়
টাংগাইল জ্যাকার্ড নকশী পাড়

১৩. হাফসিল্ক চুমকি শাড়ি

সুতি ও রেশম সুতার বুননে শাড়ি বুনা হয় এরপর এই শাড়িতে রেশমি সুতার লম্বালম্বি বুননে চুমকি দিয়ে বুনা হয় ফলে এই শাড়ি দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। এই শাড়ি বিভিন্ন জেলায় তৈরি হয় তাই এটি বাংলাদেশের হাফসিল্ক চুমকি হিসেবে জিআই হতে পারে।

হাফসিল্ক চুমকি শাড়ি
হাফসিল্ক চুমকি শাড়ি

১৪. সুতি তন্তুজ শাড়ি

টাঙ্গাইল এর তাঁত এর শাড়ির অনন্য একটি নাম সুতি তন্তুজ। এই শাড়িগুলো প্রাকৃতিক এক ধরনের ফাইবার থেকে প্রাপ্ত সুতা দিয়ে তৈরি যার ফলে অনেক নরম ও ভীষণ আরাম এর৷ শাড়িগুলোতে তাঁত মেশিনেই সুন্দরভাবে ফুল ফুটিয়ে তোলা হয়, এত সুন্দর কারুকাজ হয় যা টাঙ্গাইল এর শাড়ির জগতে অন্যমাত্রা দিয়েছে। ফঅলে এটি জিআই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সুতি তন্তুজ শাড়ি
সুতি তন্তুজ শাড়ি

১৫. কুষ্টিয়ার ধানসিঁড়ি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর তাঁত এর নব্বই বছরের ইতিহাস রয়েছে৷ কুমারখালীতে মোটা পাড়ের এক ধরণের সুতি শাড়ি হতো যা ধানসিঁড়ি নকশা নামে পরিচিতি পায়, অনেকের মতে এটি মোটা পাড়ের কোটা শাড়ি হিসেবেও খ্যাত।

কুষ্টিয়ার ধানসিঁড়ি
কুষ্টিয়ার ধানসিঁড়ি

১৬. চৌখুপী কোটা থান শাড়ি

চৌখুপী কোটা শাড়ির ইতিহাস আমাদের দেশে শত বছরের পুরনো। দক্ষ তাঁতিদের হাতে সুনিপুণ ভাবে তৈরি হতে শুরু করেছিলো শত বছর আগে। এই শাড়ির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, চারকোনা বাক্স আকারের বুনন শৈলী। ছোট ছোট বর্গাকার আকারে বোনা শাড়ি গুলো বুনন শৈলী একদম ভিন্ন। শাড়ি বুননের সময় তাঁতিরা প্রতি দুইটি সুতা পর পর একটি করে সুতা টেনে তুলে ফেলে দেন যার ফলে শাড়ি অনেক পাতলা হয়। ফলে শাড়ির ওজন কমে বিধায় শাড়ি পরিধান করতে অনেক আরামদায়ক হয়। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে রয়েছে এই চৌখুপী কোটা শাড়ির শত বছরের সম্পর্ক।

চৌখুপী কোটা থান শাড়ি
চৌখুপী কোটা থান শাড়ি

১৭. জুম শাড়ি

জুম শাড়ি মূলতঃ পাহাড়ি অঞ্চলের মেয়েদের এক প্রকার ওড়নাকে মোডিফাইড করেই ১২ হাতের শাড়িতে রুপান্তরিত করা হয়েছিলো। দেখতে কিছুটা জাল বা নেট বুননের হয় জুম শাড়ি গুলো। জুম শাড়ি লিলেন এবং সিল্ক সুতায় বোনা হয়ে থাকে যার ফলে বেশ সফট হয়। পাহাড়ি অঞ্চলের পাশাপাশি আমাদের দেশের অন্যান্য জেলা ও জুম শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।

জুম শাড়ি
জুম শাড়ি

১৮. এমব্রয়ডারি শাড়ি

টাঙ্গাইলের তাঁতের সুতি শাড়িতে এমব্রয়ডারি করে শাড়িকে আরো বেশি সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলা যায়। এই ধরনের শাড়ি গুলো কে এমব্রয়ডারি ফিউশন শাড়ি বলা হয়। এমব্রয়ডারি কাজের ইতিহাস শত বছরের পুরনো। এমব্রয়ডারি কাজ আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলায় হচ্ছে। কর্ম সংস্থান তৈরি হচ্ছে এমব্রয়ডারি কাজের মাধ্যমে।এই কাজের সঙ্গে জড়িত পুরুষ কর্মীদের সংখ্যা বেশি ।

এমব্রয়ডারি শাড়ি
এমব্রয়ডারি শাড়ি

১৯. সিরাজগঞ্জের হাফসিল্ক কাতান শাড়ি

সিরাজগঞ্জের তাঁতের শাড়ির অনেক সুনাম রয়েছে সারাবিশ্বে। সিরাজগঞ্জের হাফসিল্ক কাতান শাড়ি গুলো খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যুগ যুগ ধরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বিভিন্ন ধরনের শাড়ি শত বছর ধরে তাঁতিরা বুনছেন। সিরাজগঞ্জের তাঁতের হাফসিল্ক কাতান শাড়ি গুলো জরি সুতা এবং রেসম সুতায় মিনাকারি নকশায় বোনা হয়। শাড়ির জমিনের চেয়ে আঁচলের কাজ ভারি হয়ে থাকে।

সিরাজগঞ্জের হাফসিল্ক কাতান শাড়ি
সিরাজগঞ্জের হাফসিল্ক কাতান শাড়ি

২০. বগুড়ার ধুপছায়া শাড়ি

বগুড়ার ‘দুপচাঁচিয়া’ উপজেলা নিয়ে জনশ্রুতি আছে যে এখানে নাকি একসময় প্রচুর ‘ধুপ’ উৎপন্ন হত, আবার অনেকের মতে এককালে হিন্দু প্রধান এলাকা হিসাবে এখানে প্রচুর ধোপা শ্রেণির লোক বাস করত। এই ধোপা বা ধুপ কথাটি থেকেই কালক্রমে এই এলাকার নামকরণ হয়েছে ধোপচাঁচিয়া। আর এখানে একসময় ‘ধূপছায়া’ নামে এক ধরনের তাঁতের শাড়ি পাওয়া যেতো, যা দেশে বিদেশে অনেক বিখ্যাত ছিল। সেই ধূপছায়া শাড়ির নামে ‘ধুপচাঁচিয়া’ নামের উৎপত্তি, যা পরবর্তীতে “দুপচাঁচিয়াতে” পরিবর্তিত হয়। এই ঘটনা গুলো ১৮৮০ থেকে ১৯৮৩ সালের। এটি সেই শাড়ি, ফলে এই শাড়ির ইতিহাস রয়েছে। এই শাড়ি নিজস্বতা এবং ইতিহাসের জন্য জিআই হতে পারে।

বগুড়ার ধুপছায়া শাড়ি
বগুড়ার ধুপছায়া শাড়ি

২১. সিরাজগঞ্জের জরি পাড়ের হাফসিল্ক শাড়ি

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায় সবাই মিলে এক রকম শাড়ি পরার একটা রিতি রেওয়াজ রয়েছে। হাফসিল্ক তাঁতের শাড়িতে জরি পাড় আঁচলের সিরাজগঞ্জের তাঁতের এই শাড়ি গুলো খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রয় করা যায় বলে এই শাড়ি গুলো বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান এবং বাঙালি উৎসবের জন্য সকলের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এই জরি পাড়ের শাড়ি গুলো।

২২. পপকর্ন নকশি পাড়ের চৌখুপী কোটা শাড়ি

চিকন নকশি পাড়ের চৌখুপী কোটা শাড়িতে মোটা সুতার স্ট্রাইপ করা হয়েছে আর সুতার মাঝে মাঝে দলা বাঁধানো তুলা দেয়া হয় বুননে। এই শাড়ি গুলো কে তাঁতিরা পপকর্ন শাড়ি বলেন। মূলতঃ চৌখুপী কোটা শাড়িতে নতুনত্ব আনতে তাঁতিদের এই চেষ্টা। শাড়ি গুলো পরিধান করতে বেশ আরামদায়ক হয় বলে নারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

পপকর্ন নকশি পাড়ের চৌখুপী কোটা শাড়ি
পপকর্ন নকশি পাড়ের চৌখুপী কোপপকর্ন নকশি পাড়ের চৌখুপী কোটা শাড়িটা শাড়ি

২৩. স্কিন প্রিন্ট শাড়ি

স্কিন প্রিন্টিং পদ্ধতি খুব সহজেই করা যায়। স্কিন প্রিন্টিং করার জন্য প্রথমেই স্কিন তৈরি করতে হয় আর স্কিন তৈরির জন্য বিশেষ ধরনের সিল্ক, কটন বা পলিয়েস্টার ফাইবারের তৈরি পাতলা কাপড়কে কাঠ বা লোহার তৈরি ফ্রেমে শক্তভাবে আটকিয়ে স্কিনের উপর প্রিন্টিং পেস্ট ঢেলে রাবার স্কুইজার দ্বারা কাপড়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়। খাদি আঁচলের কটন শাড়ি তে নিজস্ব ডিজাইনে স্কিন প্রিন্ট করে বিভিন্ন রুপে সাজিয়ে তোলা যায়। স্কিন প্রিন্ট এর মাধ্যমে আমাদের দেশে কর্ম সংস্থান তৈরি হচ্ছে। স্কিন প্রিন্টের কাজের সাথে পুরুষদের সম্প্রিক্ততাই বেশি।

স্কিন প্রিন্ট শাড়ি
স্কিন প্রিন্ট শাড়ি

২৪. ব্লক শাড়ি

ব্লকের ইতিহাস সারাবিশ্বে চার হাজার বছর আগের। বাংলাদেশে ব্লকের ইতিহাসের সময়ও ত্রিশ বছরের বেশি। বাংলাদেশের বিভিন্ন শাড়িতে কাঠের ডায়েস দিয়ে রঙ এর ছাপ বসিয়ে করা হয়। এটি পুরোপুরি হাতে করা হয় তাই এটি জিআই হতে পারে।

ব্লক শাড়ি
ব্লক শাড়ি

২৫. টাংগাইলের জামদানী

টাংগাইলে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি মধ্যে টাংগাইলে তৈরি জামদানি শাড়ির ঐতিহ্য রয়েছে বহু বছরের। টাংগাইলের জামদানী সব ধরনের রঙের হয়ে থাকে। এই শাড়ির জমিনে কল্কা এবং পাড়ে জ্যামিতিক ডিজাইন ফুটে ওঠে।

টাংগাইলের জামদানী
টাংগাইলের জামদানী

২৬. কাটওয়ার্ক শাড়ি

কাটওয়ার্ক হচ্ছে হাতে কাটা কাজ। একটি বড় কাপড়কে বিভিন্ন ডিজাইনে কাটা হয়।পরে সেলাই এর মাধ্যমে একটি সুন্দর ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা হয় শাড়ির মধ্যে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়।বাংলাদেশে কাটওয়ার্ক ফিউশনের এর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে নান্দনিক কারুকাজ এর জন্য। কাটওয়ার্ক ফিউশনের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি পেয়েছে।

কাটওয়ার্ক শাড়ি
কাটওয়ার্ক শাড়ি

২৭. মিরপুরের কাতান

সিল্ক আর জরি সুতোর মিশেলে নিঁখুত, সূক্ষ্ম কারুকাজের ভারি শাড়ি মানেই কাতান।১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় প্রায় ৩০০ মুসলিম তাঁতি পরিবার ঢাকার বিভিন্ন  এলাকায় এবং মিরপুর ১০, ১১ এ বসতি স্থাপন করেন।কাতান শিল্পের  প্রকৃত বিকাশ শুরু হয় স্বাধীনতার পর থেকে। স্বাধীনতার পর এদেশের অনেক মানুষ কাজের অভাবে তাঁতি হিসেবে জীবীকা নির্বাহের জন্য তাঁত শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায় এবং তাঁতিদের সংখ্যা বৃদ্ধির পায়।এর ফলে মিরপুর ১০, ১১ ও ১২ নম্বরে গড়ে উঠে ‘মিরপুর বেনারসি পল্লি’। সেই পল্লীতেই মিরপুরের কাতান শাড়ি তৈরি হয় এবং এই কাতান শাড়ির ঐতিহ্য বহু বছরের।

মিরপুরের কাতান
মিরপুরের কাতান

২৮. নরসিংদীর প্রিন্ট শাড়ি

নরসিংদির জেলার বিখ্যাত সুতি প্রিন্ট শাড়ির শতবর্ষের ঐতিহ্য রয়েছে। এই শাড়ির মুল বৈশিষ্ট্য হলো সুতি পুরো শাড়িতে প্রিন্ট ছাপ। এই শাড়িগুলো আরামদায়ক। শাড়ি গুলো রানিং ব্লাউজ পিস সহ থাকে।

নরসিংদীর প্রিন্ট শাড়ি
নরসিংদীর প্রিন্ট শাড়ি

২৯. মাদুরাই শাড়ি

মাদুরাই শাড়ি গুলো টাংগাইল তাঁতে তৈরি হয়। এ শাড়ি গুলোর বৈশিষ্ঠ্য হলো পুরো জমিন জুড়ে জড়ি সুতার কাজ এবং চওড়া নকশী পাড়ের হয়। আগে সাদা বা অফহোয়াইট কালারের মধ্যে বিভিন্ন রঙের পাড়ের শাড়ি হলেও এখন বিভিন্ন রঙের জমিনে শাড়ি তৈরি হয়ে থাকে।

মাদুরাই শাড়ি
মাদুরাই শাড়ি

৩০. কুমিল্লার খাদি

কুমিল্লার চান্দিনাতে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত একটি তাঁতশিল্প রয়েছে, ১৯৯৪ সালে কুমিল্লার খাদিশিল্প তাদের গুণগত মানের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। কুমিল্লার চান্দিনা, মুরাদনগর ও দেবিদ্বারে সহস্রাধিক তাঁতশিল্প রয়েছে। কুমিল্লার খাদি লম্বা সময়ের লিখিত ইতিহাস রয়েছে। খাদির সব সুতো চরকায় কাটা, রেশম বা পশম হতে পারে যা শীতে উষ্ণ ও গ্রীষ্মে শীতল থাকে। এটি বাংলাদেশের নিজস্ব শাড়ি হিসেবে জিআই হতে পারে।

কুমিল্লার খাদি শাড়ি
কুমিল্লার খাদি শাড়ি

৩১. বাটিক শাড়ি

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম কমলপুর। ১৯৭৫ সালে লাল মিয়া কলকাতা এবং ত্রিপুরা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন বাটিকের। তারপর নিজ গ্রামে শুরু করেন। বিভিন্ন প্রকার বাটিক শাড়ির মধ্যে ন্যাচারাল ডাই শাড়ি একটি। ন্যাচারাল ডাই প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এই শাড়ি ডাই করা হয় সম্পূর্ন প্রাকৃতিক রঙে। শাক সবজি, ফুল ফল, শেকড়, গাছের বাকল সহ আরও অনেক কিছু থেকে সংগ্রহ করা হয় রঞ্জকের উপাদান। ন্যাচারাল ডাই সম্পূর্ন রূপে গ্রীন প্রোডাক্ট।

৩২. দিনাজপুরের গামছা শাড়ি

গামছা শাড়ি ডিজাইনটা গামছা আদলে বোনা হয় বলে একে গামছা শাড়ি বলে। দিনাজপুরের গামছা শাড়ি গুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো গামছা যে সুতা দিয়ে তৈরি করা হয় সেই সুতায় বোনা এবং দৈর্ঘ্যে প্রস্থে অন্যান্য শাড়ির তুলনায় বড়। নরম সুতায় বোনা বলে পরতে খুবই আরামদায়ক।

দিনাজপুরের গামছা শাড়ি
দিনাজপুরের গামছা শাড়ি

৩৩. গ্রামীণ চেক শাড়ি

বাংলাদেশে নব্বই এর দশকে জনপ্রিয় হওয়া একটি শাড়ি গ্রামীণ চেক এবং এই শাড়ি গামছার মোটিফকে ঘিরে সৃষ্টি। গ্রামীণ চেকের সব শাড়ি সুতির শাড়ি হয়ে থাকে। মূলত ডাই থ্রেডের বিভিন্ন রং থেকে গঠিত চতুর্ভুজ বা আয়তনের একটি প্যাটার্ন গঠন করে। এটি বাংলাদেশের নিজস্ব নকশা। তাই এটি জিআই হতে পারে।

গ্রামীণ চেক শাড়ি
গ্রামীণ চেক শাড়ি

৩৪. সিলেটের মণিপুরী শাড়ি

সিলেটের মণিপুরী শাড়ি একটি গ্ৰিন প্রডাক্ট। সম্পূর্ণ হাতের তাঁতে বোনা হয়। শাড়ির বিশেষত্ব,জাল বুননের হবে। আর এ কারণেই বাতাস চলাচল করতে পারে। শাড়ির পাড় থাকবে মৈরাং অথবা কেওয়া টেম্পল। শাড়ির টেকসই এর কথা যদি বলি, এটা যুগের পর যুগ একদম নতুনের মতো থাকে। আমাদের দেশীয় শাড়ির মধ্যে সিলেটের মণিপুরী শাড়ি অন‍্যতম।

সিলেটের মণিপুরী শাড়ি
সিলেটের মণিপুরী শাড়ি

৩৫. টাংগাইলের কাতান শাড়ি

টাংগাইলের অনেক ধরনের শাড়ির মধ্যে কাতান শাড়ি অন্যতম একটা শাড়ি। সিল্ক, সুতি ও জড়ি সুতার মিশ্রণে শাড়ি গুলো তৈরি হয়ে থাকে। ডিজাইনের বৈচিত্রে শাড়ি গুলোর ভিন্নতা তৈরি হয়। এই শাড়ি গুলো সাধারণত উজ্জ্বল রঙের সুতায় তৈরি করা হয় বলে জমকালো লাগে। বিয়ের কনে টাংগাইল কাতান শাড়ি পরে থাকে এবং উপহার হিসেবে শাড়ি গুলো প্রাধান্য দেন।

টাঙ্গাইলের কাতান শাড়ি
টাংগাইলের কাতান শাড়ি

৩৬. রংধনু শাড়ি

আমাদের দেশের রংধনু শাড়ি গুলো হাফসিল্ক, কাতান ও সুতি; তিন ধরণের হয়ে থাকে। এই শাড়িগুলোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো শাড়িগুলোতে কয়েকটি রঙ থাকে। পুরো শাড়িতে ভাগ ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন রঙ থাকে এবং পাড়ে ছয়-সাত রঙের বুনন দেওয়া হয়। ফলে এটির নাম রংধনু শাড়ি। বাংলাদেশেই এই বৈচিত্র্যময় রংধনু শাড়ি তৈরি হয়। তাই এটি জিআই হতে পারে।

রঙ ধনু শাড়ি
রঙধনু শাড়ি

৩৭. মানিকগঞ্জের ধুপিয়ান চেক শাড়ি

মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ির মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় হলো চেক ধুপিয়ান শাড়ি। এক রঙা প্লেইন পাড়ের শাড়ি গুলোর জমিন বক্স আকারের চেক বুননের হয়। হাফসিল্ক এবং রেয়ন সুতায় বোনা এই শাড়ি গুলো সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায় বলে বর্তমানে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ধুপিয়ান চেক শাড়ি গুলো।

মানিকগঞ্জের ধুপিয়ান চেক শাড়ি
মানিকগঞ্জের ধুপিয়ান চেক শাড়ি

৩৮. টেম্পল পাড়ের শাড়ি

টেম্পল পাড়ের শাড়ি গুলো বৈশিষ্ট্য হলো টেম্পলের চূড়ার মত পাড়ের ডিজাইনের হয়। এই বৈশিষ্ট্যের কারনেই শাড়ি গুলো অন্য সব শাড়ি থেকে আলাদা। টেম্পল পাড়ের প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো ইতিহাস আছে।

টেম্পল পাড়ের শাড়ি
টেম্পল পাড়ের শাড়ি

৩৯. পাবনার বড় চেক শাড়ি

পাবনা জেলার শাড়ির মধ্যে জনপ্রিয় হলো বিভিন্ন ধরনের চেক শাড়ি। এই শাড়িটি পাবনার তাঁতের বড় চেকের একটি হাফসিল্ক শাড়ি। শাড়ির জমিনে বড় বড় বর্গাকার আকারে চেক ঘর করে বোনা হয়েছে। পাবনা জেলার শাড়ি গুলো সাশ্রয়ী এবং দেখতে সুন্দর।

পাবনার বড় চেক শাড়ি
পাবনার বড় চেক শাড়ি

৪০. সুতি চিকন জরি-পাড়ের টাঙ্গাইল থান শাড়ি

টাঙ্গাইল তাঁতের আদি সুতির শাড়ি গুলো জরি পাড়ের হতো এবং ইতিহাসে এই শাড়ির দুইশ-তিনশো বছরের উল্লেখও রয়েছে। বাংলাদেশের নিজস্ব শাড়ি হিসেবে এই শাড়ি জিআই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 টাঙ্গাইল থান শাড়ি
টাঙ্গাইল থান শাড়ি

৪১. পাবনার লুঙ্গি চেক শাড়ি

লুঙ্গি চেক সাধারণত মাঝারি ও বড় চেক আকৃতির হয়ে থাকে। লুঙ্গির মত চেক বলেই একে লুঙ্গি চেক শাড়ি বলা হয়। নীল ও সবুজ শেডের সুতায় বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে এ শাড়িতে সাধারণত। এই শাড়ি গুলোর পাড়ে বর্তমানে বৈচিত্র দেখা যায়। জমাট জড়ির পাড়ে শাড়ি গুলো দেখতে খুবই সুন্দর ও ঐতিহ্যবাহী।

পাবনার লুঙ্গি চেক শাড়ি
পাবনার লুঙ্গি চেক শাড়ি

৪২. টাঙ্গাইলের তাঁতের কাঁথাস্টিচ

টাঙ্গাইলের হাফসিল্ক বা সুতি শাড়িতে মেশিনতাঁতে কাঁথা ফোঁড়ের নকশায় বুনন করা হয়। কাঁথাফোঁড় বাংলাদেশের ঐতিহ্য এবং এর লিখিত ইতিহাস রয়েছে। এটি ওজনে হালকা হয় এবং সহজে পরা যায়।

টাঙ্গাইলের তাঁতের কাঁথাস্টিচ
টাঙ্গাইলের তাঁতের কাঁথাস্টিচ

৪৩. নকশীপাড়ের পপকর্ন

বাংলাদেশের নকশীপাড়ের পপকর্ন শাড়ি হিসেবে জিআই হতে পারে। বিভিন্ন জেলার নকশী পাড়ের হাফসিল্কে ছিটানো সুতার কাজ হয় এবং সুতা গুলো লম্বালম্বি ভাবে আসা সুতায় বলের মতো পেঁচিয়ে নির্দিষ্ট দুরত্ব মেনে বুনন তোলা হয়। এটি পাওয়ারলুমের শাড়ি। এটি বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায়না।

নকশীপাড়ের পপকর্ন
নকশীপাড়ের পপকর্ন

৪৪. পাবনার জরি পারের কটন শাড়ি

এ শাড়ি মুলত পাবনা তাঁতের শাড়ি হিসেবেই পরিচিত। শাড়িটির বৈশিষ্ট্য হলো চওড়া পেটানো জরি পার এবং জরি আঁচল। সুতি সুতায় বুনা তাঁতের শাড়ি হিসেবে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধরনের শাড়ি বেশ আরামদায়ক এবং শাড়ির দাম হাতের নাগালে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এই শাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

পাবনার জরি পারের কটন শাড়ি
পাবনার জরি পারের কটন শাড়ি

৪৫. দিনাজপুরের হ্যান্ডলুম শাড়ি

দিনাজপুরের হ্যান্ডলুম শাড়ি গুলো দৈর্ঘ্যে প্রস্থে অনেক লম্বা হয়। নরম সুতায় বোনা হয় বলে পরতে অনেক আরামদায়ক এবং দুই পাড় দুই রঙের হয় ।

দিনাজপুরের হ্যান্ডলুম শাড়ি
দিনাজপুরের হ্যান্ডলুম শাড়ি

৪৬. গঙ্গা যমুনা পাড়ের শাড়ি

আমাদের দেশের বিভিন্ন ধরনের শাড়ি বোনা হয়। তার মাঝে পাড়ের নকশায় ভিন্নতার পাশাপাশি রঙের ও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন একটি শাড়ির দুটি পাড় দুই রঙের ও বোনা হয়। দুই রঙের পাড়ের শাড়ি গুলো কে গঙ্গা যমুনা পাড়ের শাড়ি বলা হয়। গঙ্গা যমুনা পাড়ের শাড়ি।

গঙ্গা যমুনা পাড়ের শাড়ি
গঙ্গা যমুনা পাড়ের শাড়ি

৪৭. মাসলাইড শাড়ি

মাসলাইস বিশেষ এক প্রকার কটন শাড়ি, যা দেখতে অনেকটা সিল্কের মতো গ্লেসি হয়ে থাকে। মাসলাইস শাড়িকে মার্সেরাইজড কটন শাড়িও বলা হয়। কারণ সাধারণ কটন সুতাকে মার্সেরাইজেশন পদ্ধতির মাধ্যমে মাসলাইস বা মার্সেরাইজ কটন সুতায় পরিণত করা হয়। মাসলাইস শাড়ি সাধারণ কটন শাড়ি থেকে সফট এবং শাইনি হয়ে থাকে, যা একই সাথে ক্লাসি লুক এবং আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। মার্সেরাইজেশনের ফলে মাসলাইস সুতার রং এর স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় মাসলাইস শাড়ির রং এর ঔজ্জ্বল্য ধুলে সহজে নষ্ট হয় না। মাসলাইস শাড়িতে প্রায় ৫০ রকমের ডিজাইন হয়ে থাকে।

মাসলাইড শাড়ি
মাসলাইড শাড়ি

৪৮. টাংগাইল তাঁত কটন নকশী পাড়ের শাড়ি

টাংগাইলের ঐতিহ্যবাহী শাড়ির মধ্যে এটা এক ধরনের শাড়ি। এ শাড়ির বৈশিষ্ট্য হলো জমিন এক কালারের মধ্যে নকশী কালারফুল পাড় এবং সম্পূর্ন সুতি সুতায় তৈরি।

৪৯. মুহাম্মদপুরের কারচুপি শাড়ি

মুহাম্মদপুরের কারচুপি শাড়ি স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন ধরনের শাড়িতেই কারচুপি হয়ে থাকে।।ভারী এবং হালকা ধরনের কাজ চাহিদা অনুযায়ী তৈরি হয় এবং চাহিদা বৃদ্ধি হওয়ায় সবসময় কারচুপির কাজ হচ্ছে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মুহাম্মদপুরের কারচুপি শাড়ি
মুহাম্মদপুরের কারচুপি শাড়ি

৫০. যশোর স্টীচ শাড়ি

১৯৬০ দশকে যশোরে সেলাই এর নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। প্রগতিশীল নারী আয়েশা সর্দার এই কাজের মূল রূপকার। ১৯৫৫ সালে পুরাতন কসবা এলাকায় বেগম আয়েশা সর্দার ‘যশোর মহিলা শিল্প বিদ্যালয় সমাজকল্যাণ সংস্থা নামে সেলাই স্কুলের দায়িত্ব নিয়ে ‘যশোর স্টিচ’ সূচ শিল্পকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন। আশির দশকে যশোর স্টীচ বাংলার ঘরে ঘরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে এই যশোর স্টীচ দিয়ে জামদানী ডিজাইন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন করা হয়।

যশোর স্টীচ শাড়ি
যশোর স্টীচ শাড়ি

৫১. যশোরের কাঁথা স্টীচ শাড়ি:

মূল শাড়িটি বোনার পর তাঁতীদের কাছ থেকে সেই কাপড় এনে তাতে বিভিন্ন ধরনের নকশা আঁকা হয়। যেমন- ফুল, পাতা, গাছ, পদ্ম, সূর্য, চন্দ্র, রথ, কলসি, নৌকো, বিভিন্ন প্রাণী, মাছ, পালকি, ইত্যাদির অবয়ব তৈরি করা হয়। তারপর সেগুলির উপর রঙিন সুতা দিয়ে সেলাই করে তৈরি করা হয় কাঁথা স্টিচের শাড়ি।

মূলতঃ বাঙ্গালির ঘরোয়া সেলাইয়ের রীতি হলো কাঁথা স্টীচ। এই সেলাই পদ্ধতিকেই মূলত কাঁথা স্টিচ বলা হয়ে থাকে। যশোর জেলায় কাঁথাস্টীচের ব্যবহার বিপুল পরিমাণে হয়ে থাকে। যা এখন সারা পৃথিবী খ্যাত।

যশোরের কাঁথা স্টীচ শাড়ি
যশোরের কাঁথা স্টীচ শাড়ি

লেখক : উম্মে সাহেরা এনিকা, জেনিস ফারজানা তানিয়া, আরজেনা হক সেবতি, সঞ্চিতা বসাক, কাজী মেহেরজাবিন রাখি এবং আইরিন আক্তার রিতা

উস্থাপনা: নিগার ফাতেমা, উম্মে সাহেরা এনিকা, আরজেনা হক সেবতি, জেনিস ফারজানা তানিয়া, আইরিন আক্তার রিতা, মিনা ভৌমিক, কাজী মেহেরজাবিন রাখি, ফারজানা আফরোজ রত্না, সঞ্চিতা বসাক এবং রেহমুমা হোসেন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *