বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে, এর মূলে রয়েছে – এনার্জি ক্রাইসিস। আমাদের দেশেও এর প্রভাব লক্ষ্যনীয়, যা খুবই স্বাভাবিক। এই ক্রাইসিস থেকে বের হওয়ার উপায় কী? বা আমরা কীভাবে এর মোকাবিলা করতে পারি? সমাধান হলো- এনার্জির ব্যবহার কমানো বা সৌরবিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস, জলবিদ্যুতের মতো রি-নিওয়েবল এনার্জি উৎপাদন করে ক্রাইসিসের মোকাবিলা করা।
যাই হোক, এই লেখার উদ্দেশ্য এতো গভীর আলোচনায় যাওয়া না। আজকে গ্রীন বিজনেস নিয়ে চিন্তা করতে করতেই এনার্জি ক্রাইসিস টার্মটার সাথে একে সরাসরি রিলেটেবল মনে হচ্ছিল বলে লিখতে ইচ্ছে হলো।
গ্রীন বিজনেস টার্মের মূল উদ্দেশ্য হলো-
- পরিবেশের ক্ষতি করে এমন এনার্জির ব্যবহার কমানো,
- গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানো,
- কম ক্ষতিকর এনার্জি উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি,
- স্থানীয় বা দেশিয় যাই বলেন, সেই সব পণ্যের অপচয় রোধ করা, ব্যবহার বৃদ্ধি করা,
- প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা,
- সম্পদের রিসাইকল এবং রিইউজ করা।
আরেকভাবে গ্রীন বিজনেসকে সংজ্ঞায়িত করা হয়-
গ্রীন বা সাসটেইনেবল বিজনেস হলো লোকাল বিজনেস, যেই বিজনেসের কাঁচামাল থেকে শুরু করে সবকিছু যতটুকু সম্ভব লোকাল সোর্স থেকে সংগ্রহ করা হয়, স্থানীয়দের পণ্য বা সেবা সরবরাহ করা হয়, স্থানীয় শ্রমিকরাই এতে কাজ করে এবং এটি দেশের নিজস্ব সম্পদের অপচয় কমিয়ে কাজে লাগাতে সাহায্য করে, দেশকে সমৃদ্ধ করে।
উপরের এতো সব কথা বলার মূল উদ্দেশ্য হলো-
আমি দেখলাম গ্রীন বিজনেসের মূল কনসেপ্টের সাথে আমাদের দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি শতভাগ সাদৃশ্যপূর্ণ। গ্রীন বিজনেসের সব রিকুয়ারমেন্টস এই ইন্ডাস্ট্রি ফুলফিল করছে। আমি কয়েকটা উদাহরণ দিয়েই বলছি।
প্রথমত, ই-কমার্স বিজনেসে উদ্যোক্তাদের আলাদা কোনো শোরুম দরকার হয় না। তাই শোরুমের জন্য বাড়তি এনার্জি বা বিদ্যুতের অপচয় হয় না। আমরা জানি, শপিং মলগুলোতে কি পরিমাণ বিদ্যুৎ অপচয় হয়, তাই এখন সন্ধ্যার পর শপিং মল বন্ধ রাখার নিয়ম করা হয়েছে। ই-কমার্স বিজনেস এদিক থেকে আদর্শ বলব আমি, আর দেশি পণ্যের উদ্যোক্তারা মূলত মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করেই বিজনেস কার্যক্রম পরিচালনা করে, যা চালাতে খুব বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয় না।
দ্বিতীয়ত, দেশিয় পণ্যের উদ্যোক্তারা একদম লোকাল সোর্স থেকেই তাদের পণ্যের সোর্সিং করে থাকে, তাই তারা নির্দিষ্ট ভাবে দেশিয় পণ্যের উদ্যোক্তা হিশেবে পরিচিত।
তৃতীয়ত, আমাদের হ্যান্ডলুম পোশাকের তাঁতিরা হস্তচালিত তাঁতে বুনন কাজ করেন যেখানে এনার্জির দরকার হয় না। এর মাঝে খেশ ফেব্রিক হলো আবার রিসাইকল করা, যার ডিজাইন করতে পুরনো কাপড় ব্যবহার করা হয়৷ গ্রামীন কাঁথাশিল্প পুরনো কাপড় রিসাইকল বা রিইউজের অন্যতম উদাহরণ। খাদি, ভেজিটেবল ডাই এর বাটিকও গ্রীন ফ্যাশনের মাঝে অন্যতম।
পাট আমাদের অন্যতম সেরা দেশি ফাইবার, যা দিয়ে তৈরি সবই পরিবেশের জন্য ভালো। তারপর বাঁশ, বেত, হোগলা পাতায় তৈরি বিভিন্ন আসবাব, মাটি এবং কাঁসা পিতলের বাসনকোসন এগুলোও সবই স্বাস্থ্যকর এবং গ্রীন।
সব ডিটেইলে লিখলে আসলে বিশাল আর্টিকেল হয়ে যাবে। তবে সবশেষে এটাই বলতে চাই, দেশি পণ্য হলো দেশের যে কোনো ক্রাইসিস মেটানোর মূলভিত্তি। তাই এই ইন্ডাস্ট্রিকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে আমাদের, এই বিষয়গুলো প্রচার করতে হবে।
এবং গ্রীন বিজনেস কনসেপ্টকে আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রির সাথে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ আর কোলাবোরেশান দরকার, এক্ষেত্রে Niger Fatema আপুর তৈরি দেশি পণ্যের সিলেবাসকে অবশ্যই সবচেয়ে প্রায়োরিটি দিতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সরকারি- বেসরকারি সব সেক্টরে এর চর্চা করতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে এটাই মনে হয়েছে আমার।
দিনাজপুর তাঁতশিল্প (New Hope for our Green Industry)
ইকো-ফ্র্যান্ডলি বা গ্রীন বা সাসটেইনেবল ফ্যাশন, বিজনেস, ইন্ডাস্ট্রি এবং ইকোনমি এই বিষয়গুলো নিয়ে অল্প স্বল্প ঘাঁটাঘাঁটি করছি গত কয়েক মাস ধরেই। আর ফিল করেছি এই টার্মগুলোকে ফোকাস করে আমাদের দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রির আরও প্রচার হওয়া দরকার।
দিনাজপুরের তাঁতশিল্পকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য, প্রমোট করার জন্য দেশি পণ্যের গ্রুপগুলোতে দিনাজপুর ওয়েভের ডাক দিয়েছিলেন Razib Ahmed স্যার। ১৬-১৭ অক্টোবর ২দিনের জন্য এই ওয়েভ ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
দিনাজপুরের তাঁতশিল্পের পুরোটাই হ্যান্ডলুম নির্ভর, সেখানে পাওয়ারলুম বা মেশিন লুমের কোনো শাড়ি বা পণ্য তৈরি হয় না। আর হ্যান্ডলুম মানেই সেখানে কোনো মেশিনের প্রয়োগ নেই, এনার্জির অপচয় নেই, গ্রীন হাইজ গ্যাস এবং কার্বন নিঃসরণ নেই, তাই পরিবেশের দূষণ নেই। তাই এই অঞ্চলের তাঁতশিল্পের প্রপার ব্র্যান্ডিং হলে পুরো দিনাজপুরের মানুষের জীবনযাত্রা এবং অর্থনীতিতেই দারুণ প্রভাব ফেলবে, যা আমাদের দেশের গ্রীন বিজনেস ক্যাম্পেইন নতুন মাত্রা পাবে।
দিনাজপুরের শাড়ি নিয়ে একটা এক্সিবিশন বা ইভেন্টও হয়েছে মুহাম্মদপুরের ক্লাব মিক্সে, যেখানে ৭০টার বেশি শাড়ি বিক্রি হয়েছে, সবাই দিনাজপুরের শাড়ি পরে ইভেন্টে এসেছে, একে রিপ্রেজেন্ট করেছে। ১০০ এর বেশি দেশি পণ্যের গ্রুপে কয়েক হাজার পোস্ট এসেছে দিনাজপুরের তাঁত, শাড়ি এবং তাঁতপণ্য নিয়ে।
দিনাজপুরের উদ্যোক্তাদের টিমের প্রত্যেকে নিজের পণ্যের প্রচার বাদ দিয়ে দিনাজপুরের শাড়ি নিয়ে লিখছে কয়েক মাস যাবত। দিনাজপুরের শাড়ির ক্রেতাদের নিয়ে স্টোরি টেলিং করছে সবাই মিলে একযোগে। এবং যার যার মতো শাড়িগুলোতে ফিউশন এনে ব্র্যান্ড ভ্যালু এড করছে। কেউ হ্যান্ডপেইন্ট করছে, কেউ হাতের কাজ করছে, কেউ ব্লক করছে, কেউ শাড়ি থেকে কুর্তি ডিজাইন করছে ইত্যাদি অনেক কিছুই ইতিমধ্যে দেখেছি আমরা।
এই সেক্টরকে ঘিরে এখন সরকারি -বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। সবচেয়ে কার্যকরী হবে, গ্রীন বিজনেসে আগ্রহী উদ্যোক্তা এবং ইনভেস্টররা যদি আগ্রহী হয় এখন দিনাজপুরের এই হ্যান্ডলুম তাঁতশিল্পকে কেন্দ্র করে। আশা করি এখন থেকে গ্রীন ইন্ডাস্ট্রি ক্যাম্পেইনে দিনাজপুরের তাঁতশিল্প আলাদা গুরুত্ব পাবে।
গ্রিন বিজনেস নিয়ে আমাদের দেশে কাজ হচ্ছে কী?
অবশ্যই হচ্ছে! আমাদের দেশে গ্রিন বিজনেস নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে গত কয়েক বছর ধরেই এবং তা মূলত হচ্ছে RMG বা রেডি মেইড গার্মেন্টসকে কেন্দ্র করে৷ যেহেতু আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রির উপর দেশের রপ্তানি বানিজ্য এবং বৈদেশিক রিজার্ভ অনেকাংশে নির্ভরশীল, তাই এর উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া খুব স্বাভাবিক। কারণ আমাদের গার্মেন্টসের বড় ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন সাসটেইনেবল বা গ্রিন ফ্যাশনের দিকে ঝুঁকছে। তাই এই মার্কেট ধরে রাখতে আমাদেরকে গ্রিন বিজনেসে মুভ করতেই হবে। তাই BGMEA এখন গ্রিন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার দিকে চেষ্টা করছে, ফ্যাক্টরিগুলো একে একে গ্রিন সনদপ্রাপ্ত হচ্ছে৷ এটা অবশ্যই প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।
তবে আমার মনে হচ্ছে এই ধরনের ফ্যাক্টরি বেইজড ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে নতুন ভাবে গ্রিন করার উদ্যোগের পাশাপাশি অলরেডি আমাদের যে সব সেক্টর গ্রিন অর্থাৎ পরিবেশ বান্ধব, সেগুলোর দিকেও নজর দেয়া উচিত, আরও প্রচার বৃদ্ধি করা উচিত।
আমাদের অলরেডি গ্রিন সেক্টরের সবটাই দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রি কেন্দ্রিক।
যেমনঃ গ্রামীণ সব শিল্প, কৃষিপণ্য, কুটির শিল্প এবং তাঁত স্পেশালি হ্যান্ডলুম তাঁত।
এই সেক্টরগুলোকে গ্রিন বিজনেস হিশেবে তুলে ধরা উচিত আমাদের, অনেক বেশি প্রচার দরকার এবং এগুলোকে আরও কীভাবে গ্রিন বা ইকো-ফ্র্যান্ডলি করা যায়, আর কী ইনোভেশন আনা যায় সেদিকে চিন্তা করতে হবে। তবেই প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মসংস্থান বাড়বে, গ্রামীন জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে, গ্রাম থেকে মানুষ শহরমুখী কম হবে এবং এতে দেশের সার্বিক অর্থনীতি সমৃদ্ধি লাভ করবে।
এক্ষেত্রে প্রথমে দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের উচিত এখন থেকে গ্রিন বিজনেস নিয়ে স্টাডি করা, নিজেদের মধ্যে প্রথম এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা এবং গ্রিন বিজনেসের বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে নিজেদের বিজনেসকে রিলেট করে কন্টেন্ট তৈরি করা। এটি এখন খুব দরকার আমাদের গ্রিন ফ্যাশন বা বিজনেস কেন্দ্রিক কাস্টমার বেইজ তৈরি করার জন্য।
গ্রিন ইকোনমি
গ্রিন ইকোনমি তৈরি করতে চাইলে সবার আগে ফোকাস করতে হবে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। গ্রিন ইকোনমির মূল উদ্দেশ্যগুলোর মাঝে অন্যতম হলো, প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি। আর আমাদের দেশে কৃষির পর গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির দ্বিতীয় বৃহত্তম সেক্টর হলো, হ্যান্ডমেইড কুটির শিল্প এবং তাঁত। এই সেক্টরগুলোকে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি হিশেবে ভালো ভাবে স্বীকৃতি দেয়া দরকার এবং প্রচার করা দরকার।
হ্যান্ডমেইড কুটিরশিল্প এবং হ্যান্ডলুম তাঁত পুরোপুরি হলো, ম্যান পাওয়ার বেইজড সেক্টর। তাঁতি এবং কারিগরদের শক্তি, শ্রম এবং দক্ষতা এখানে প্রাধান্য পায়, কোনো ক্ষতিকর এনার্জি চালিত যন্ত্র না।
আর আমাদের দেশের তাঁতিদের দক্ষতার সুনাম সারাবিশ্ব জুড়েই আছে প্রাচীনকাল থেকে, যা বিশ্বের অন্য কোথাও নেই। কিন্তু আমাদের সচেতনতার অভাবে এই দক্ষ জনগোষ্ঠীর দক্ষতাকে আমরা প্রপারলি কাজে লাগাতে পারছি না। তাই অসংখ্য তাঁতিরা তাঁতের কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় জীবিকার সন্ধান করছে। এটা অর্থনীতির জন্য এক রকম হুমকি বলা যায়। কারণ হ্যান্ডলুম তাঁতিদের দক্ষতার বিকল্প আমরা অন্য খাতে কোনো ভাবেই তৈরি করতে পারব না।
এক সময় যেমন ইংরেজদের শিল্প বিপ্লব আর পাওয়ার লুমের কাছে আমাদের মসলিন তাঁতিদের হার হয়েছিল। আমি ভীত ভেবে এখন না আমাদের নিজেদের অধিক শিল্পায়নের প্রভাবে আমাদের দক্ষ হ্যান্ডলুম তাঁতিরা পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়! এক সময় তাহলে আমাদের সব ঐতিহ্য শুধু ইতিহাসের পাতায়ই আবদ্ধ হয়ে যাবে, বাস্তব উপস্থিতি থাকবে না।
তবে এমনটা অবশ্যই আমরা হতে দিতে পারি না। আর যেহেতু এখন আমাদের দেশি পণ্যের একটা বিশাল ইন্ডাস্ট্রি আছে, উদ্যোক্তারা ডেডিকেটেড ভাবে কাজ করছে নিজের দেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য। তাই আশা করা যায় আমাদের হ্যান্ডলুম তাঁত বেঁচে থাকবে তাদের হাত ধরে।
এছাড়া এখন যেহেতু আমাদের হারানো মসলিনও আমাদের সরকারের উদ্যোগে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তাই এদিকে সরকার যথেষ্ট আগ্রহী নিঃসন্দেহে। আমাদের দরকার শুধু এখন বিশ্বের পরিবেশবান্ধব বা গ্রিন মুভমেন্টের সাথে আমাদের এই শিল্পগুলোকে রিলেট করে প্রচার করা। তারও আগে দরকার আমাদের নিজেদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা।
আমরা হ্যান্ডলুম তাঁতকে গ্রিন বিজনেস হিশেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে, এই সেক্টর নিয়ে মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে, দেশেও গ্রিন ফ্যাশনের কাস্টমার বেইজ তৈরি হবে। হ্যান্ডলুম তাঁতগুলো আবার সচল হবে দিনাজপুরের তাঁতশিল্পের মতো। তাঁতিরা নিজেদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারবে, তাদের থেকে শিখে এদিকে আরও দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে এর বিকল্প হতেই পারে না। কারণ বাংলাদেশের মাত্র ৪টা জেলা- বাগেরহাট, ভোলা, চাঁদপুর ও লক্ষীপুর বাদে প্রতিটি জেলায়ই তাঁত রয়েছে। কতটা বিস্তৃত আর সম্ভাবনাময় সেক্টর এটা বুঝতেই পারছি।
Saree– The best example for Green Fashion
গ্রিন ফ্যাশনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো-
অনেক বেশি টেকসই হবে, অসংখ্য বার ব্যবহার হবে এবং লাইফটাইম শেষ হওয়ার পরও রিসাইকল করে অন্য একটা প্রোডাক্টে রূপান্তর করা যাবে। বাঙালির জাতীয় পোশাক শাড়ি এই বৈশিষ্ট্যগুলো খুব ভালো ভাবেই ধারণ করে।
শাড়িকে তাই গ্রিন বা সাসটেইনেবল বা স্লো ফ্যাশন হিশেবে রিপ্রেজেন্ট করতে হবে আমাদেরকে। কারণ-
প্রথমত, লক্ষ্য করে দেখবেন আমাদের শাড়ির লাইফটাইম সবচেয়ে দীর্ঘ। উত্তরাধিকার সূত্রে সবচেয়ে বেশিবার হাত বদল হওয়া পোশাক এটা। আমাদের নানু দাদুর শাড়ি মায়ের হাত ধরে আমাদের আলমারি পর্যন্ত পৌঁছায়। এরপর হয়ত আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও এর কোনো কোনোটা রয়ে যাবে। তারপরও শাড়ির লাইফটাইম যেন শেষ হওয়ার নয়।
দ্বিতীয়ত, ৬গজ দীর্ঘ একটা শাড়ি থেকে খুব সহজেই ২টা সুন্দর কুর্তি ডিজাইন করে ফেলা যায়। আমরা দুই বোন আম্মুর বেশ কিছু শাড়ি কেটে ম্যাচিং গাউন বানিয়ে পরেছি। আরও কিছু শাড়ি আলাদা করে রেখে দিয়েছি ডিজাইন করে ড্রেস বানানোর জন্য।
এছাড়াও কিন্তু আরও অনেক কিছুই তৈরি করা যায় একটা শাড়ির বিভিন্ন অংশ দিয়ে। মেয়েদের পোশাকের পাশাপাশি ছেলেদের পোশাকও শাড়ি থেকে তৈরি করা সম্ভব। মজার ব্যাপার হলো, আমি আর আমার বোন মিলে আম্মুর একটা শাড়ি আলাদা করে রেখেছিলাম দুজন ম্যাচিং ড্রেস বানাব বলে। কিন্তু হঠাৎ দেখি শাড়িটা উধাও। পরে আবিষ্কার করি আব্বু শাড়িটা নিয়ে পাঞ্জাবি বানিয়ে নিয়ে এসেছেন উনার জন্য। খুবই মজা পেয়েছিলাম আমরা ব্যাপারটায়। তবে আব্বুকে সেই পাঞ্জাবিতে বেশিই স্মার্ট লাগছিল। আব্বু অলওয়েজ একটু বেশিই ফ্যাশনেবল।
সাধারণত শাড়ি আমাদের এখন খুব কম পরা হয়। কয়েক বার পরার পর তাই সেগুলো দিয়ে অনেক ইনোভেশনের সুযোগ থাকে আমাদের, যা কাজে লাগাতেই পারি। আর শাড়ি কখনো আসলে পুরোনো হয় না, এর ট্রেন্ড কখনো শেষ হয় না। তাই একে বলা হয় – Timeless Fashion.
তৃতীয়ত, শাড়িকে রিসাইকল করতেও প্রাচীনকাল থেকে বাঙালিরা বেশ পটু। গ্রামীন কাঁথাশিল্প আর নকশী কাঁথার ঐতিহ্য শুরু হয়েছিল এই পুরোনো শাড়িকে রিসাইকল করার মাধ্যমেই। গ্রামীন কাঁথাশিল্পের অনেকটাই বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়, যাকে আমরা আবার পুনোরুদ্ধারের জন্য কাজ করতে পারি। প্রচার করতে পারি।
তাহলে শাড়ি শুধু আমাদের দেশেই না, গ্রিন ফ্যাশন হিশেবে সারাবিশ্বেই আরও বেশি পরিচিতি লাভ করবে। ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ানরা এদিকে বেশ ভালো ভাবেই ফোকাস করছে। আমরা তাই এখন থেকে উদ্যোগী না হলে পিছিয়েই পরব।
গ্রীন ফ্যাশন আর বিজনেস নিয়ে আসলে অনেক কিছু লেখার আছে।
গ্রিন বিজনেস প্রোডাক্ট রিসাইকেলের দিকে অনেক বেশি ফোকাস করে। বিশ্ব ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে রিসাইকল, আপসাইকল শব্দগুলো বর্তমানে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে এবং বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো এদিকে অনেক বেশি ফোকাস করছে, নতুন নতুন স্ট্র্যাটেজি এপ্লাই করছে। অনেক ব্র্যান্ড ক্রেতাদের জন্য রিসাইকল বিনের সুবিধা দিচ্ছে, যেখানে ক্রেতারা তাদের পুরনো জিনিস জমা দেয়। এটি তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বহুগুন বাড়িয়ে তুলছে ক্রেতাদের কাছে।
যেমন – আমাদের দেশি পণ্যের উদ্যোক্তারাও ক্রেতাদের জন্য এভাবে প্রোডাক্ট রিসাইকলের একটা সুযোগ রাখতে পারেন।
ধরেন, ক্রেতাকে প্রোডাক্ট নেয়ার সময় বলে দিতে পারেন যে, যখন এই প্রোডাক্ট তাদের আর ব্যবহার করা হবে না, অপ্রয়োজনীয় মনে হবে তখন তারা চাইলে আপনাদের কাছে প্রোডাক্টটা জমা দিতে পারেন। আপনারা সেটা একটা নির্ধারিত মূল্যে ক্রেতাদের থেকে কিনে নিবেন। ক্রেতাদের ইউজড প্রোডাক্ট এভাবে কালেক্ট করার জন্য আপনারা প্রোডাক্টের অরিজিনাল প্রাইস অনুযায়ী একটা দাম নির্ধারণ করে নিলে ভালো হবে। অথবা এর বিনিময়ে ক্রেতাদেরকে ডিস্কাউন্ট কুপনও অফার করতে পারেন তাদের পরবর্তী যে কোনো কেনাকাটার জন্য।
তারপর সেই প্রোডাক্টগুলোকে কিছুটা আপগ্রেড বা রিসাইকল করে নতুন রূপ দিয়ে রিসেল করতে পারবেন। এই প্রসেসটাকে বলা হয় আসলে Upcycling. অর্থাৎ একটা প্রোডাক্টকে নতুন এবং আরও উন্নত জীবন দেয়া, নতুন ভাবে ভ্যালু এড করা।
আপসাইকল করা প্রোডাক্টকে আপনার বিজনেসের নতুন প্রোডাক্ট লাইন হিশেবে এড করতে পারেন। ক্রেতারা জেনেই কিনবে যে, এটা রিসাইকল বা আপসাইকল করা প্রোডাক্ট। এতে ক্রেতা এবং আপনাদের মাঝে একটা ক্লিন আস্থার সম্পর্ক তৈরি হবে, সেটিফেকশন কাজ করবে ভেবে যে একটা ভালো জার্নির অংশ হতে পেরেছে তারা।
সবচেয়ে ভালো লাগছে আমার চিন্তা করে যে, এটা আপনার বিজনেসের জন্য আলাদা রকম একটা গল্প তৈরি করবে। কারণ এটি এমনিতেই ভিন্ন রকম একটা প্র্যাক্টিস আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। রিসাইকল, আপসাইকল শব্দগুলোর সাথে আমরা এখনো অনেক কম পরিচিত।
এছাড়াও আসলে প্রত্যেকটা প্রোডাক্টের সাথেই তার ক্রেতার একটা মেমোরি, একটা গল্প, একটা ইমোশনাল টাচ থাকে। সেগুলোকে যদি আপনি ক্যাপচার করতে পারেন এবং আপসাইকল করা প্রোডাক্টটি গল্পের মাধ্যমে প্রেজেন্ট করতে পারেন তাহলে আরও অনেক বেশিই টাচ করবে মানুষকে সেগুলো। ডেফিনিটলি আপনার বিজনেসের ভ্যালু এর মাধ্যমে বহুগুন বেড়ে যাবে।
তবে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন – এ ধরনের উদ্যোগের জন্য আমাদের ইন্ডাস্ট্রির ক্রেতাদেরকে এদিকে জানাতে হবে, সচেতন করতে হবে।
প্রথমত, মানুষ রিসাইকল করা প্রোডাক্ট বলতেই ভেবে নিবে এটার প্রাইস কম হবে, যা পুরোপুরি ভুল একটা ধারণা। কারণ একটা পুরনো প্রোডাক্টকে নতুনরূপ দেয়া, এতে ইনোভেশন আনা, ডিজাইনে আপডেট করা ইত্যাদির পেছনে খরচের জন্য কখনো কখনো অরিজিনাল প্রোডাক্ট এর চেয়ে অনেক গুন বেশি হয়ে যায় এর প্রাইস। ৫০০ টাকার প্রোডাক্টকে ৫০ হাজার টাকার প্রোডাক্টেও রূপান্তর করা সম্ভব আপসাইক্লিং করে। এই ব্যাপারগুলো সম্পর্কে ক্লিয়ার আইডিয়া ক্রেতাদেরকে দিতে হবে।
আসলে এই টার্মগুলো নিয়ে অনেক কিছু ভাবার আছে এবং অনেক আইডিয়া জেনারেট করার মতো আছে। যা আমরা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজে লাগিয়ে গ্রিন বিজনেস হিশেবে ভ্যালু এড করার পাশাপাশি দেশ, সমাজ এবং পরিবেশের অনেক সমস্যারও সমাধান নিয়ে আসতে পারি।
** পুরনো কাপড়কে রিইউজ করা, নতুন রূপ দেওয়ায় আসলে বাঙালিরা সারাজীবনই ক্রিয়েটিভ ছিল এবং আছে৷ নতুন করে গ্রিন ফ্যাশন নিয়ে আমি ধারাবাহিক ভাবে আবার লেখার ফলে যা হয়েছে, সবার রিসাইকল করে ইনোভেশন আনার বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ গল্পগুলো বেরিয়ে আসছে। নতুন ভাবে আবার সবাই এই ব্যাপারটাকে ভাবছেন, গুরুত্বের সাথে চিন্তা করছেন। খুব ভালো লাগছে সবার পোস্ট আর স্মৃতিচারণা পড়ে। এই ব্যাপারটাই কিন্তু অনেক কিছুর পথ তৈরি করে দিচ্ছে আমাদের জন্য।
কোনো একটা আইডিয়া শেয়ার করা এবং তা নিয়ে আলোচনা করার সুফল এটাই যে, একটা আইডিয়া নিয়ে সবার সম্মিলিত চিন্তা তখন সেই আইডিয়ায় পারফেকশন তো নিয়ে আসেই, সেই সাথে আরও অসংখ্য নতুন আইডিয়ার জন্ম দেয়।
যে কোনো আইডিয়া কখনো শতভাগ পারফেক্টলি বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। কারণ আমাদের সিচুয়েশনগুলো সব সময় ভ্যারিয়েবল হওয়ায় সিচুয়েশন অনুযায়ী অনেক কিছু পরিবর্তন পরিমার্জন হয়, শুরু করার পর প্র্যাক্টিকাল অভিজ্ঞতা থেকে অনেক ভুল বেরিয়ে আসে, তারপর সেটা ধীরে ধীরে শক্তিশালী একটা আইডিয়ায় রূপান্তর করা সম্ভব হয়।
কোনো একটা সমস্যার সমাধানেই নতুন আইডিয়া চিন্তা করা হয়, সেটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অনেক বাঁধা, অনেক সমস্যা তৈরি হয়, এটাই বাস্তবতা। আমরা তাই নেগেটিভ পজিটিভ দুই দিক নিয়েই ভাবব, কিন্তু পজিটিভ মাইন্ডসেট ধরে রাখব একটা দিকে যে, আমাদের আইডিয়া অবশ্যই সফল হবে যদি নিয়মিত স্টাডি করি, চিন্তা করি এবং এর আপডেটের পেছনে সময় দিয়ে যাই৷
আমাদের দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রিকে ঘিরেও তাই গ্রিন ফ্যাশন এবং বিজনেস কেন্দ্রিক যে সব আইডিয়া আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, সেগুলো আমি শেয়ার করছি আপনাদের সাথে যেন সবার সম্মিলিত চিন্তা, লেখা এবং প্রচারের মাধ্যমে এটা খুব সুন্দর একটা রূপ পায় এক সময়। আলোচনা, পর্যালোচনা এবং প্রচার যে কোনো আইডিয়া ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম তাই আমরা সবাই মিলে জানব, জানাব, প্রচার করব এবং ছোট পরিসরে একটা পাইলটিং প্রজেক্টের চিন্তা করব যা দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা যাবে আমরা ঠিক ভাবে এগুচ্ছি কিনা বা আর কী কী স্টেপ নেয়া যেতে পারে।
আর আমাদের দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রিটা এখন বেশ বড়, আমাদের ১০০ এর উপরে গ্রুপ আছে যারা একসাথে, একভাবে চলছে। তাই আমি খুবই আশাবাদী আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে গ্রিন ফ্যাশন এবং বিজনেস হিশেবে রিপ্রেজেন্ট করা নিয়ে।
রিসাইকল বা আপসাইকল বেইজড ডিজাইনার দরকার আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে
দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে বড় যে ক্রাইসিসটা আমি ফিল করতাম শুরু থেকে, তা হলো- ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার ক্রাইসিস। Fariha Naznin Nizhum আপুকে পেয়ে আমাদের এই ক্রাইসিস অনেকাংশে কমেছে। যে কোনো সাধারণ ফেব্রিককেই ভিন্ন মাত্রা দেয়ার অসাধারণ একটা ক্ষমতা আপুর আছে বলে মনে হয় আমার। তাই রিসাইকল বেইজড ডিজাইন এবং ডিজাইনারের চিন্তা মাথায় আসতেই আমার নিঝুম আপুর কথা মনে হয়েছে আর স্যারের সাথেও এটা শেয়ার করেছিলাম। আপুকে কেন্দ্র করে যে সব আইডিয়া আমার মাথায় এসেছে, সেগুলোর একটা এই পোস্টে শেয়ার করব।
আমাদের আসলে গ্রিন বিজনেস হিশেবে এই ইন্ডাস্ট্রিকে রিপ্রেজেন্ট করতে হলে যত ভাবে সম্ভব গ্রিন বিজনেসের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে নিজেদেরকে সেদিকে আপগ্রেড করতে হবে এবং প্রচার করতে হবে। তাই রিসাইক্লিং এবং আপসাইক্লিং এর চর্চাটা খুব বেশি দরকার। এর মাধ্যমে আমাদের গ্রিন বিজনেসের মেসেজটাও আমরা খুব দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারব। প্রথমে তাই লাভজনক বিজনেসের চিন্তা না করে আমাদেরকে এদিকে কিছু পাইলটিং করতে হবে, এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে, সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
আর এজন্যই এদিকে ডিজাইনার দরকার আমাদের রিসাইকল বেইজড ডিজাইনকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবং এই মেসেজটা দিতে যে, রিসাইকল বা আপসাইকল মানেই পুরনো না, বরং পোশাককে নতুন আর উন্নত জীবন দেয়া।
• প্রথমে আমাদের ১০-২০ জনের কিছু পুরনো অব্যবহৃত শাড়ি এবং ড্রেস নিঝুম আপুকে পাঠিয়ে দিতে পারি। আপু সময় নিয়ে সেগুলোতে ইনোভেশন আনবেন, নতুন ভাবে তৈরি করবেন। শুধু যে পোশাকই বানাতে হবে তা না। পুরনো শাড়ি ড্রেসের বিভিন্ন অংশ দিয়ে পর্দা, কোশন কভার, টেবিল ম্যাট, ওয়ালম্যাট ইত্যাদি সহ অসংখ্য হোম ডেকোরের সৌখিন জিনিসপত্র, বিভিন্ন রকমের ব্যাগও তৈরি করা যায়।
তারপর আবার আমাদের ফুরোশিকি র্যাপিং আইডিয়াও এখানে কাজে লাগানো যায়। এমনকি আপুর ডিজাইন করতে গিয়ে যে সব ওয়াস্টেজ কাপড়ের ছোট টুকরো বের হবে, যা অন্য কিছুতে আর এড করা সম্ভব না, সেগুলোকেও তুলার পরিবর্তে কুশন বা বালিশের ভেতরে ব্যবহার করে কাজে লাগানো যাবে। সব মিলিয়ে আপু যত ধরনের ইনোভেশন আনা সম্ভব আনতে পারেন, যত বেশি সম্ভব কাপড়ের সদ্ব্যবহার করা যায় তিনি করবেন এভাবে।
এরপর আপু উনার সব ডিজাইনের কাজ শেষ করার পর ঢাকায় WVA বা ক্লাব মিক্সে একটা এক্সিবিশন নিঝুম আপুর এই রিসাইকল বেইজড ডিজাইনকে কেন্দ্র করে হতে পারে৷ সবাই এতে অংশ নিবে, ধরে ছুঁয়ে সব দেখবে, ভালো লাগলে কিনতে আগ্রহী হবে আর গ্রুপগুলোতে প্রচার করবে, আলোচনা করবে। রিসাইকল করে কতটা অসাধারণ এবং মূল্যবান সব জিনিস তৈরি করা সম্ভব তা সবার মাথায় এভাবে খুব সহজে ঢুকে যাবে। এটা আমাদের পাইলটিং এর প্রথম ধাপ বলতে পারি আমরা। উদ্দেশ্য শুধুই গ্রিন বিজনেস এবং ইনোভেটিভ রিসাইক্লিং পণ্যের প্রচার করা।
নিঝুম আপুর পরে আমার মাথায় আরেকজন আপুর কথা ঘুরে ফিরে বার বার আসছে। তিনি হলেন Rebeka Nasrin আপু। আপুকে আমরা সাতক্ষীরার মাদুরের জন্য চিনলেও গ্রিন বিজনেস নিয়ে আমার লেখার কমেন্টের মাধ্যমে জানলাম প্রথম যে, আপু গ্রামীন কাঁথাশিল্প নিয়েও কাজ করছেন। আপুর কাঁথাগুলো তৈরির মূল উপাদান পুরনো শাড়ি। এগুলোতে আবার লুঙ্গি এবং বড় ওড়নাও ব্যবহার করা যায়। আপুর এই কাঁথাশিল্প নিয়েও তাই আমরা এভাবে চিন্তা করতে পারি। আমাদের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী রিসাইক্লিং পণ্য হিশেবে প্রচার করতে পারি।
আসলে এভাবে রিসাইক্লিং পণ্যগুলোকে আমাদের দেশি পণ্যের ই-কমার্সের মাধ্যমে যত বেশি তুলে ধরতে পারব, প্রচার করতে পারব, আমাদের মাঝে এর প্র্যাক্টিস এবং ব্যবহার বাড়াতে পারব। এই ইন্ডাস্ট্রি ইকো-ফ্র্যান্ডলি বা গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি হিশেবে তাহলে তত বেশি এগিয়ে যাবে।
লেখিকাঃ